Personal loan for home: বাড়ি সংস্কারের স্বপ্ন কে না দেখে? কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে অনেকেরই স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। আমি অর্পিতা মজুমদার (কল্পিত নাম) কলকাতার একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য, যিনি ২০২৫ সালে ব্যক্তিগত ঋণের সাহায্যে আমার পুরনো, জরাজীর্ণ বাড়িকে একটি আধুনিক এবং নান্দনিক বাসস্থানে রূপান্তরিত করেছি। এই প্রতিবেদনে আমি আমার এই যাত্রার গল্প শেয়ার করব—কীভাবে আমি শূন্য থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবহার করে মাত্র ৬ মাসে আমার বাড়িকে একটি স্বপ্নের ঠিকানায় পরিণত করলাম। এই গল্পে থাকবে আগে-পরে দৃশ্য, DIY (Do It Yourself) টিপস এবং আর্থিক পরিকল্পনার কৌশল, যা আপনারাও আপনার স্বপ্নের বাড়ি গড়তে ব্যবহার করতে পারেন।
যাত্রার শুরু: একটি জরাজীর্ণ বাড়ি
আমার পরিবার কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলের একটি পুরনো বাড়িতে থাকত। ৩০ বছরের পুরনো এই বাড়ির দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ, ফাটল ধরা মেঝে এবং পুরনো তারের সমস্যা ছিল। আমরা সবাই এই বাড়ির পরিবর্তন চাইতাম, কিন্তু আমাদের সঞ্চয় মাত্র ২ লক্ষ টাকা ছিল, যা সংস্কারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমার বেতন থেকে সঞ্চয় করতে আরও ২-৩ বছর লাগত, কিন্তু আমরা আর অপেক্ষা করতে চাইনি। তখনই আমি ব্যক্তিগত ঋণের কথা ভাবলাম।
ব্যক্তিগত ঋণ: স্বপ্নের প্রথম ধাপ
আমি একটি স্বনামধন্য ব্যাংক থেকে ১০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ নিলাম, যার সুদের হার ছিল ১১.৫% এবং মেয়াদ ৫ বছর। আমার মাসিক ইএমআই নির্ধারিত হলো ২২,১০০ টাকা, যা আমার মাসিক বেতনের ৩৫% এর মধ্যে ছিল। ঋণ নেওয়ার আগে আমি বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হার তুলনা করি এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি ও প্রিপেমেন্ট শর্ত পরীক্ষা করি। আমার ক্রেডিট স্কোর ৭৮০ ছিল, যা আমাকে কম সুদের হারে ঋণ পেতে সাহায্য করেছিল।
বাজেট এবং পরিকল্পনা
সংস্কার শুরু করার আগে আমি একটি বিস্তারিত বাজেট তৈরি করি। আমার লক্ষ্য ছিল বাড়ির মূল কাঠামো মজবুত করা, অভ্যন্তরীণ সজ্জা নতুন করে সাজানো এবং কিছু DIY প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ কমানো। আমার বাজেট ছিল এরকম:
• কাঠামোগত সংস্কার (দেয়াল, মেঝে, ছাদ): ৪ লক্ষ টাকা
• বৈদ্যুতিক ও প্লাম্বিং কাজ: ২ লক্ষ টাকা
• ফার্নিচার ও সজ্জা: ২.৫ লক্ষ টাকা
• DIY প্রকল্প (পেইন্টিং, গাছপালা, হ্যান্ডমেড ডেকোর): ৫০,০০০ টাকা
• অপ্রত্যাশিত খরচ: ১ লক্ষ টাকা
আমার ২ লক্ষ টাকার সঞ্চয় এবং ১০ লক্ষ টাকার ঋণ মিলিয়ে মোট ১২ লক্ষ টাকার বাজেট ছিল, যা আমার পরিকল্পনার জন্য যথেষ্ট ছিল।
আগে-পরে: রূপান্তরের গল্প
আগে: আমার বাড়ির বসার ঘরের দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ ছিল, মেঝে ভাঙা এবং আলোর ব্যবস্থা অপ্রতুল। রান্নাঘরের সিঙ্ক ফুটো ছিল, এবং শোবার ঘরে পুরনো কাঠের আলমারি ছিল।
পরে: ৬ মাসের সংস্কারের পর, বাড়িটি সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা দেয়ালে জলরোধী প্লাস্টার এবং নতুন রঙ করেছি, মেঝেতে মার্বেল টাইলস বসিয়েছি, এবং আধুনিক LED আলোর ব্যবস্থা করেছি। রান্নাঘরে মডুলার ক্যাবিনেট এবং নতুন সিঙ্ক বসানো হয়েছে। শোবার ঘরে মিনিমালিস্ট ফার্নিচার এবং নরম রঙের দেয়াল এখন শান্তির পরিবেশ দেয়।
DIY প্রকল্প: খরচ কমানোর কৌশল
আমি খরচ কমাতে বেশ কিছু DIY প্রকল্প করেছি। উদাহরণস্বরূপ, আমি এবং আমার বোন বসার ঘরের দেয়ালে হ্যান্ড-পেইন্টেড ডিজাইন করেছি, যা আমাদের ২০,০০০ টাকা বাঁচিয়েছে। আমরা পুরনো কাঠের আলমারি রিসাইকেল করে নতুন রঙ করে ব্যবহার করেছি। বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগানে আমরা নিজেরা গাছ লাগিয়েছি, যা আমাদের বাড়ির নান্দনিকতা বাড়িয়েছে। এই DIY প্রকল্পগুলি শুধু খরচ কমায়নি, বরং আমাদের বাড়ির প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর করেছে।
আর্থিক পরিকল্পনা: ঋণ পরিশোধ
ঋণ পরিশোধের জন্য আমি একটি কঠোর বাজেট তৈরি করেছি। আমার মাসিক আয়ের ৩৫% ইএমআই-এর জন্য রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত আয়ের জন্য আমি ফ্রিল্যান্স প্রজেক্ট নিয়েছি, যা আমাকে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা বাড়তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করেছে। আমি প্রতি বছর বোনাসের অর্ধেক ঋণের প্রিপেমেন্টে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছি, যা সুদের বোঝা কমাবে। এছাড়া, আমি আমার জরুরি তহবিল (৪ লক্ষ টাকা) অক্ষুণ্ণ রেখেছি, যাতে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে সমস্যা না হয়।
অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
এই যাত্রা আমাকে শিখিয়েছে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ঋণ আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
• বাজেট তৈরি করুন: সংস্কারের প্রতিটি খরচের হিসাব রাখুন।
• DIY ব্যবহার করুন: ছোট ছোট প্রকল্পে নিজে হাত লাগালে খরচ অনেক কমে।
• ইএমআই পরিকল্পনা: ইএমআই আপনার আয়ের ৪০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়।
• প্রিপেমেন্ট সুবিধা: কম সুদের হার এবং প্রিপেমেন্ট ছাড়ের ব্যাংক বেছে নিন।
আগে-পরে ভিজুয়াল
আমার বাড়ির আগে-পরে ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার পর অনেকে আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। আগে যেখানে দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দাগ ছিল, এখন সেখানে আধুনিক শিল্পকর্ম। পুরনো মেঝে এখন চকচকে মার্বেলে রূপান্তরিত। বাড়ির প্রতিটি কোণ এখন আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। এই ভিজুয়াল রূপান্তর আমাদের পরিবারের জন্য শুধু একটি বাড়ি নয়, বরং একটি নতুন শুরুর প্রতীক।
ব্যক্তিগত ঋণ আমার বাড়ি সংস্কারের স্বপ্ন পূরণ করেছে, এবং মাত্র ৬ মাসে আমি আমার জরাজীর্ণ বাড়িকে একটি আধুনিক, নান্দনিক বাসস্থানে পরিণত করেছি। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা, DIY কৌশল এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে আমি ঋণের বোঝা কমিয়ে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। আপনিও যদি আপনার বাড়ি রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেন, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত ঋণের সাহায্যে তা সম্ভব। আপনার গল্প কী? আপনার স্বপ্নের বাড়ি গড়ার পরিকল্পনা শুরু করুন এবং আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন!