ভারতে নিঃশব্দে ঘটছে এক বড় জনসংখ্যাগত পরিবর্তন। দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হার দ্রুত বাড়ছে। সিবিআরই সাউথ এশিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ১৭ শতাংশ ভারতেই থাকবে। এই পরিবর্তনের ফলে প্রবীণদের জন্য স্বাধীন আবাসন ও আর্থিক সহায়তার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ৬০ বছর পার করার পর অবসরজীবনে কীভাবে হোম লোন পাওয়া সম্ভব, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
অবসর-পরবর্তী হোম লোনের সুযোগ
আজকের দিনে ভারতের ব্যাংক ও NBFC (Non-Banking Finance Companies) প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একাধিক হোম লোন পণ্য অফার করছে। তবে সাধারণ হোম লোনে বয়সের কারণে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে—
সুদের হার তুলনামূলক বেশি
ঋণের পরিমাণ কম
মেয়াদ সাধারণত ছোট হয় (১০–১৫ বছর)
যোগ্যতার শর্ত কঠোর
অন্যদিকে, পেনশন ভিত্তিক ঋণে কিছুটা সুবিধা মেলে। কারণ এখানে পেনশনকে একটি স্থায়ী আয়ের উৎস হিসেবে ধরা হয়। ফলে শর্ত কিছুটা শিথিল হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে সুদের হারও কম হয়।
রিভার্স মর্টগেজ: প্রবীণদের জন্য বিশেষ সুবিধা
৬০-এর পর হোম লোনের ক্ষেত্রে রিভার্স মর্টগেজ একটি উল্লেখযোগ্য বিকল্প। এখানে প্রবীণরা তাঁদের নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে অর্থ পান।
EMI দিতে হয় না।
ব্যাংক মাসিক ভাতা, লাম্প সাম বা ধাপে ধাপে টাকা দেয়।
প্রবীণ ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই বাড়িতে থাকতে পারবেন।
মৃত্যুর পর ব্যাংক বাড়ি বিক্রি করে ঋণের টাকা উদ্ধার করবে। অতিরিক্ত টাকা থাকলে তা উত্তরাধিকারীদের হাতে যাবে।
এই ব্যবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা প্রবীণদের জন্য আর্থিক সুরক্ষার “সেফটি নেট” বলে মনে করছেন।
ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর টিপস
৬০ বছরের পর হোম লোন পেতে হলে কিছু নিয়ম মানা জরুরি—
ভালো ক্রেডিট স্কোর: ৭৫০ বা তার বেশি রাখুন।
আয়ের প্রমাণ: পেনশন, ভাড়া, ডিভিডেন্ড ইত্যাদি স্পষ্টভাবে দেখান।
ঋণমুক্ত থাকুন: যতটা সম্ভব অন্যান্য ঋণ কমিয়ে ফেলুন।
বেশি ডাউন পেমেন্ট: ডাউন পেমেন্ট বেশি হলে LTV (Loan-to-Value) অনুপাত কমে, ফলে অনুমোদন সহজ হয়।
সহ-আবেদনকারী যুক্ত করুন: তরুণ পরিবারের সদস্যকে কো-অ্যাপ্লিক্যান্ট করলে ঋণের মেয়াদ ও যোগ্যতা বাড়ে।
মেয়াদ পরিকল্পনা করুন: সর্বোচ্চ ৭৫ বছর বয়সের মধ্যে ঋণ শোধ করার পরিকল্পনা করুন।
সরকারি স্কিম খুঁজুন: Senior Citizen Housing Scheme বা অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মত
বেসিক হোম লোনের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা অতুল মঙ্গা বলেন, “সঠিক আয়ের পরিকল্পনা, শক্তিশালী ক্রেডিট প্রোফাইল এবং উপযুক্ত মেয়াদ নির্বাচন করলেই অবসরকালীন জীবনে বাড়ির মালিকানা অর্জন সম্ভব। তরুণ সহ-ঋণগ্রহীতা যুক্ত করলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়।”
সব মিলিয়ে, অবসর-পরবর্তী জীবনে হোম লোন নেওয়া একসময় অসম্ভব মনে হলেও এখন আর তা নয়। সঠিক প্রস্তুতি, সঠিক কাগজপত্র এবং পরিকল্পিত আর্থিক পদক্ষেপ নিলে ৬০ বছর পরেও বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।