হিন্দুস্তান ন্যাশনাল গ্লাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (HNG) নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠন এইচএনজি ইন্ডাস্ট্রিজ শ্রমিক কল্যাণ সংঘম সম্প্রতি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সংস্থার স্থগিত পরিচালক সঞ্জয় সোমানি ও মুকুল সোমানির বিরুদ্ধে ৪২.৪৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও তহবিল সরানোর অভিযোগ তুলে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। শ্রমিক সংগঠনটি জানিয়েছে, দু’জনেই “গুরুতর পলায়ন ঝুঁকি” তৈরি করেছেন এবং যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন।
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থায় অভিযোগ:
শ্রমিক সংগঠনটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে সিবিআই, ইডি, এসএফআইও, অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা, অর্থ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে। সংগঠনটি অভিযোগে বলেছে, এনসিএলটি-র কলকাতা বেঞ্চ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে রায় দেয় যে ৪২.৪৬ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে সরানো হয়েছে এবং ঋণদাতাদের ঠকানো হয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল দুই পরিচালককে দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে, না হলে সম্পত্তি থেকে টাকা উদ্ধার করা হবে।
জরুরি পদক্ষেপের দাবি:
শ্রমিক সংগঠনটি অভিযোগকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত, লুক-আউট সার্কুলার জারি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির বক্তব্য, এভাবে আইন প্রয়োগ করে বিচারব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং ঋণদাতা ও শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।
ফরেনসিক অডিটে প্রতারণা প্রকাশ:
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিডিও ইন্ডিয়া এলএলপি কর্তৃক পরিচালিত ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এর ফরেনসিক অডিটে একাধিক ভুয়ো ভেন্ডর লেনদেন ধরা পড়ে। এই লেনদেন হয়েছিল দুর্বিশ ব্যবসায়, রাফব্রিক্স ইন্টারন্যাশনাল, মৈথান সিরামিক ও মোল্ড ইকুইপমেন্ট নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আদালত রেজোলিউশন প্রফেশনাল (আরপি) গিরীশ জুনেজাকে এই সংক্রান্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও শ্রমিক সংগঠনের দাবি, এখনও পরিষ্কার নয় আদৌ কোনো মামলা দায়ের করা হয়েছে কি না।
শ্রমিকদের দুর্দশা:
শ্রমিক সংগঠনটির অভিযোগ, হাজার হাজার শ্রমিক এখন বেকায়দায় পড়েছেন। বহু মাস ধরে বেতন বকেয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ড আটকে আছে, সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত বঞ্চনার মুখে পড়ছে। সংগঠনের অভিযোগ, এত বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করায় শ্রমিক পরিবারগুলো চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে।
সংস্থার পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা:
উল্লেখ্য, ঋণে ডুবে থাকা এইচএনজি-কে অক্টোবর ২০২১-এ এনসিএলটি কর্পোরেট দেউলিয়া প্রক্রিয়ার আওতায় আনে। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, ২০২৫ সালের আগস্টে এনসিএলটি-র কলকাতা বেঞ্চ স্বাধীন সুগার কর্পোরেশন লিমিটেডের (আইএনএসসিও) পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মোট ২,২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ১,৯০০ কোটি টাকা নগদ একসঙ্গে দেওয়া হবে, ৩৫০ কোটি টাকা আগামী তিন বছরে কিস্তিতে দেওয়া হবে ঋণদাতাদের। পাশাপাশি ঋণদাতারা পাবেন কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার।
নতুন মালিকানা ও ভবিষ্যৎ:
৪৫ দিনের মনিটরিং পর্যায় শেষে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে মাধভানী গ্রুপের হাতে। মনিটরিং কমিটি পদত্যাগ করবে এবং গ্রুপের মনোনীত নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেবে। শ্রমিক সংগঠন আশাবাদী যে নতুন মালিকানায় স্বচ্ছতা আসবে, শ্রমিকদের পাওনা মিটবে এবং সংস্থার স্বাভাবিক উৎপাদন আবারও চালু হবে। তবে তারা জোর দিয়েছে, আত্মসাৎ মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।