বুধবার সকালে শেয়ার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বড় ধাক্কা খেল হিন্দুস্তান জিঙ্ক লিমিটেড (Hindustan Zinc Limited)। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (NSE) এই সংস্থার শেয়ার দর এক ধাক্কায় কমে যায় ৬ শতাংশেরও বেশি। এই পতনের ফলে শেয়ারের দাম এসে দাঁড়ায় ৪৫৭ টাকায়, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে বড়সড় আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মজবুত পারফরম্যান্স, তবু পতন!
আশ্চর্যের বিষয়, সদ্য প্রকাশিত ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের শেষ কোয়ার্টারের (Q4 FY24) আর্থিক রিপোর্টে হিন্দুস্তান জিঙ্ক উল্লেখযোগ্য লাভের মুখ দেখেছে। শুধু তাই নয়, সংস্থা ডিভিডেন্ডও ঘোষণা করেছে, যা সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ইতিবাচক সংকেত বলে ধরা হয়।
তাহলে হঠাৎ এমন পতনের কারণ কী?
সম্ভাব্য পতনের কারণসমূহ
১. মেটাল সেক্টরে সামগ্রিক চাপ: বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ধাতু শিল্পে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং চিনের বাজারে ধীরগতির কারণে গোটা মেটাল সেক্টরেই কিছুটা চাপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা লাভ তুলে নেওয়ার (profit booking) দিকে ঝুঁকছেন।
২. বড় ডিভিডেন্ডের পরে প্রফিট বুকিং: হিন্দুস্তান জিঙ্ক সম্প্রতি উচ্চ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলতে শুরু করেছেন। এই ধরণের ব্যাপক বিক্রির ফলে স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা কমে গিয়ে শেয়ারের দাম পড়ে যায়।
৩. টেকনিক্যাল কারেকশন: অনেক বিশ্লেষকের মতে, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে হিন্দুস্তান জিঙ্কের শেয়ার দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে এটি একটি “কারেকশন ফেজ” অর্থাৎ শেয়ার দামের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষার অংশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
৪. বাজারে বৈশ্বিক চাপ ও ভোটপরবর্তী উদ্বেগ: দেশীয় বাজারে ভোটপরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন সুদের হার সংক্রান্ত জল্পনার কারণেও শেয়ারবাজারে সাময়িক চাপ রয়েছে। এই সমস্ত কারণ মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে হিন্দুস্তান জিঙ্কের ওপরেও।
যদিও এক দিনের পতন থেকেই দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দেওয়া যায় না, তবু বিনিয়োগকারীদের উচিত হঠাৎ আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত না নেওয়া। হিন্দুস্তান জিঙ্ক একটি শক্তিশালী ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি, যাদের রিজার্ভ এবং উৎপাদন ক্ষমতা যথেষ্ট মজবুত।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বর্তমান পতনকে একটি বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে, বিশেষ করে যদি শেয়ার দাম আরও কিছুটা কমে যায় এবং কোম্পানির মৌলিক অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে।
হিন্দুস্তান জিঙ্কের মতো বড় সংস্থার ক্ষেত্রে শেয়ার দামের ওঠানামা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এর পেছনের আর্থিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলি বুঝে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। একদিনের পতনে আতঙ্কিত না হয়ে লং টার্ম ভিউ রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন সংস্থা নিজেই মজবুত পারফরম্যান্স এবং ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে।