পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সাগরদিঘীর পাড়ে খাসমহলে হচ্ছে হেরিটেজ গ্যালারি

অয়ন দে, কোচবিহার: রাজার শহর কোচবিহারের ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সাগরদিঘীর পাড়ে খাসমহলে তৈরি হচ্ছে একটি হেরিটেজ গ্যালারি (Sagar Dighi gallery)। কোচবিহার হেরিটেজ…

Heritage Gallery Coming Up at Sagar Dighi

অয়ন দে, কোচবিহার: রাজার শহর কোচবিহারের ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সাগরদিঘীর পাড়ে খাসমহলে তৈরি হচ্ছে একটি হেরিটেজ গ্যালারি (Sagar Dighi gallery)। কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সৌন্দর্যায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জোরকদমে চলছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দেড় মাসের মধ্যে এই গ্যালারি পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই উদ্যোগ কোচবিহারের রাজঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী খাসমহল, যা একসময় রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, এতদিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। তবে হেরিটেজ কমিটির সাম্প্রতিক সভায় এই স্থাপত্যকে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর অনলাইন টেন্ডারের মাধ্যমে একটি বেসরকারি সংস্থাকে খাসমহলের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা জানিয়েছেন, “এই হেরিটেজ গ্যালারি পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হবে। এখানে তারা কোচবিহারের রাজঐতিহ্যের ইতিহাস, প্রাচীন ছবি এবং পৌরাণিক বইয়ের মাধ্যমে রাজপরিবারের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানতে পারবেন।”

   

হেরিটেজ গ্যালারির বিশেষত্ব
খাসমহলের এই হেরিটেজ গ্যালারি কোচবিহারের রাজপরিবারের ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলবে। গ্যালারিতে মহারাজাদের বড় আকারের ছবি, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং রাজ আমলের বিভিন্ন দলিল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। এছাড়া, পর্যটকরা এখানে পৌরাণিক বই পড়ার সুযোগ পাবেন, যা কোচবিহারের রাজত্বের গল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য তুলে ধরবে। গ্যালারির স্থাপত্য নকশা রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা এই স্থাপত্যের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছেন। এই উদ্যোগের ফলে খাসমহলের প্রাচীন সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং এটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।

কোচবিহারের ঐতিহ্য ও পর্যটনের সম্ভাবনা
কোচবিহার, যাকে ‘রাজার শহর’ বলা হয়, তার রাজপরিবারের ইতিহাস, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে সবসময়ই আকর্ষণীয়। সাগরদিঘীর পাড়ে অবস্থিত খাসমহল এই ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গ্যালারি চালু হলে পর্যটকরা কোচবিহারের রাজ আমলের বিভিন্ন দিক, যেমন রাজাদের জীবনযাত্রা, শাসনব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারবেন। এটি শুধু পর্যটকদের জন্যই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের একটি সুযোগ।

Advertisements

কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, “এই গ্যালারি কোচবিহারের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবে। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত দলিল হবে।” এই উদ্যোগের ফলে কোচবিহারে পর্যটন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কারণ পর্যটকদের আগমন বাড়লে স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল এবং পরিবহন খাতে সমৃদ্ধি আসবে।

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ
জেলা প্রশাসন এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা বলেন, “আমরা চাই কোচবিহারের ঐতিহ্য বিশ্বের কাছে পৌঁছে। খাসমহলের হেরিটেজ গ্যালারি এই লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ।” তবে, এই প্রকল্পের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রাচীন স্থাপত্যের সংরক্ষণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, এবং এর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ও দক্ষতার প্রয়োজন। তবে খড়গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে প্রশাসন আশাবাদী।

কোচবিহারের সাগরদিঘীর পাড়ে খাসমহলে তৈরি হচ্ছে এই হেরিটেজ গ্যালারি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং রাজার শহরের ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত সাক্ষ্য। এটি পর্যটকদের জন্য একটি নতুন গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের গর্বের কারণ হয়ে উঠবে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে এই গ্যালারি উন্মুক্ত হলে কোচবিহারের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নতুনভাবে প্রাণ পাবে। তাই, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী যারা, তাদের জন্য খাসমহলের এই হেরিটেজ গ্যালারি হবে একটি অবশ্যদর্শনীয় স্থান।