সবজির দামে আগুন, রান্নার মেনুতে বদল আনতে বাধ্য গৃহিণীরা

রাজ্যে বর্তমানে আবহাওয়ার মারাত্মক রূপ সরাসরি প্রভাব ফেলেছে কৃষিক্ষেত্রে। টানা নিম্নচাপ ও লাগাতার বৃষ্টির ফলে রাজ্যের বহু কৃষিনির্ভর জেলা আজ দুর্দশার মুখে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার…

Vegetable Price today in kolkata 30 august 2025

রাজ্যে বর্তমানে আবহাওয়ার মারাত্মক রূপ সরাসরি প্রভাব ফেলেছে কৃষিক্ষেত্রে। টানা নিম্নচাপ ও লাগাতার বৃষ্টির ফলে রাজ্যের বহু কৃষিনির্ভর জেলা আজ দুর্দশার মুখে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা হোক কিংবা উত্তরবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, নদিয়া বা পূর্ব মেদিনীপুর—সব জায়গাতেই কমবেশি কৃষকরা আজ সমস্যায় জর্জরিত। মূলত ধান ও সবজির চাষের(Vegetable price) মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে জমির জল বের হতে না পারায় ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে ব্যাপক হারে।

অগস্ট মাস সাধারণত রোয়া ধানের জমিতে পরিচর্যার সময়। কিন্তু এবার টানা বর্ষণের ফলে বহু জায়গায় ধানের জমিতে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে জল দাঁড়িয়ে থাকায় ধানের গোড়ায় পচন ধরেছে, অনেক ক্ষেতেই পুরো চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ, যেমন কুমড়ো, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গে ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। চাষের জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকার ফলে শিকড়ে অক্সিজেন পৌঁছচ্ছে না, ফলে গাছ দ্রুত মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে গাছের পাতায় ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হয়েছে।

   

এই পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে রাজ্যের বাজারে। সবজির (Vegetable price) জোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছে হু-হু করে। সাধারণত যেসব সবজি ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, সেগুলির দাম এখন পৌঁছেছে ৫০-৬০ টাকায়। ঢেঁড়স, পটল, করলা, ঝিঙ্গে—এসব সবজির দাম(Vegetable price) প্রতি কেজিতে গড়ে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন কাঁচালঙ্কা বা বেগুনের মতো জিনিসের দাম (Vegetable price) তো একপ্রকার ছুঁয়েছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।

বাজারে গেলে সাধারণ মানুষ এখন একপ্রকার আতঙ্কেই থাকছেন। যাঁরা দৈনিক বাজার করেন, তাঁদের মুখে স্পষ্ট হতাশার ছাপ। একজন মধ্যবয়সী ক্রেতা জানালেন, ‘‘আগে ২০০ টাকায় (Vegetable price) যেটুকু বাজার হত, এখন সেখানে লাগছে অন্তত ৩৫০-৪০০ টাকা। তাও আবার অনেক কিছু বাদ দিতে হচ্ছে।’’ এক গৃহবধূ বললেন, ‘‘এখন তো সবজি কিনে আনলে ভাবতে হচ্ছে কিভাবে কম খরচে রান্না করা যায়।’’

Advertisements

এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও কৃষকদের জন্য বিশেষ কোনও ত্রাণ বা সাহায্যের ঘোষণা এখনও হয়নি। অনেক কৃষক সংগঠন ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছে, রাজ্য সরকারের উচিত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা এবং পরবর্তী কৃষি মরসুমের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য প্রদান করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। অতিবৃষ্টি, অনিয়মিত বর্ষণ ও হঠাৎ করে হওয়া বন্যা কৃষিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজ্যের কৃষিনীতি ও পরিকাঠামোতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

এই মুহূর্তে রাজ্যের কৃষক এবং সাধারণ জনগণ—দু’পক্ষই অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে মাঠে ফসল ডুবে যাচ্ছে জলে, অন্যদিকে বাজারে গিয়ে দাম শুনে মাথায় হাত পড়ছে মধ্যবিত্তের। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, জমে থাকা জল ও তার ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এই সময় রাজ্য সরকারের উচিত বাস্তব সম্মত, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কৃষি ও বাজার (Vegetable price) ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। কারণ কৃষি ভেঙে পড়লে শুধু কৃষকরাই নন, গোটা সমাজই তার চাপ অনুভব করে।