স্বাস্থ্য বিমা (Health Insurance) প্রত্যেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য। চিকিৎসার খরচ ক্রমশ বাড়তে থাকায়, বিমা না থাকলে অবসরকালীন সঞ্চয় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাসপাতালে মাত্র কয়েকদিন ভর্তি থাকার জন্যও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। তবে, প্রবীণরা কিছু স্মার্ট কৌশল অবলম্বন করে স্বাস্থ্য বীমার খরচ কমাতে পারেন, এবং তা না কমিয়ে কভারেজ বজায় রেখে। এখানে রইল বয়স্কদের জন্য চিকিৎসা বীমা সাশ্রয়ী করার কিছু কার্যকর উপায়।
তাড়াতাড়ি শুরু করুন:
স্বাস্থ্য বিমার (Health Insurance) প্রিমিয়াম কম রাখতে হলে তাড়াতাড়ি শুরু করা জরুরি। ৩০ বছর বয়সে বিমা কিনলে প্রিমিয়াম অনেক কম হবে, যা ৬০ বছর বয়সে কিনলে অনেক বেশি হয়ে যায়। এছাড়া, বিমা পলিসিতে “নো-ক্লেম বোনাস” থাকে, যা কোনও দাবি না করলে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়। বহু বছরের কভারেজ নিলে আরও সাশ্রয় হয়। তিন বছরের পলিসিতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। তাই, তাড়াতাড়ি শুরু করলে দীর্ঘমেয়াদে খরচ অনেক কমে যায়।
বিভিন্ন প্ল্যান তুলনা করুন:
বিমা কেনার সময় তুলনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণদের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য বিমা খুঁজতে বিভিন্ন প্ল্যান তুলনা করুন। ডিজিটাল যুগে এখন এই তুলনা করা সহজ হয়ে গেছে। অনেক বিমা কোম্পানি প্রবীণদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বিমা প্ল্যান চালু করেছে। অনলাইনে বিভিন্ন বিমাকারীর পণ্য তুলনা করা যায়। আপনার প্রয়োজন এবং আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্ল্যানটি বেছে নিন। এতে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি উপযুক্ত কভারেজও পাওয়া যাবে।
ডিডাক্টিবল ও কো-পে বেছে নিন:
প্রিমিয়াম নিয়ন্ত্রণে আরেকটি উপায় হল ডিডাক্টিবল এবং কো-পে বেছে নেওয়া। ডিডাক্টিবল মানে, বিমাকারী দাবি মেটানোর আগে আপনাকে নিজের পকেট থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ডিডাক্টিবল ৫ লক্ষ টাকা হয় এবং দাবি ৩ লক্ষ টাকার হয়, তবে আপনাকেই পুরো টাকা দিতে হবে। কিন্তু দাবি ৮ লক্ষ টাকার হলে, আপনি ৫ লক্ষ দেবেন এবং বিমা ৩ লক্ষ টাকা দেবে। কো-পে একইভাবে কাজ করে, তবে এটি শতাংশ হিসেবে গণনা করা হয়। যেমন, ২০ শতাংশ কো-পে থাকলে ২ লক্ষ টাকার খরচে আপনি ৪০,০০০ টাকা দেবেন এবং বাকিটা বিমাকারী দেবে। এই দুটি বিকল্পই বিমাকারীর দায় কমিয়ে প্রিমিয়াম অনেকটা কমিয়ে দেয়।
বেস প্ল্যানের সঙ্গে সুপার টপ-আপ নিন:
প্রিমিয়াম কমানোর আরেকটি উপায় হল সুপার টপ-আপ প্ল্যান কেনা। এটি এমন একটি পলিসি যা আপনার বিদ্যমান বেসিক স্বাস্থ্য বিমার কভারেজ বাড়িয়ে দেয়। ধরা যাক, আপনার বেসিক প্ল্যানে ৩ লক্ষ টাকার কভারেজ আছে। যদি চিকিৎসা খরচ এই সীমা ছাড়িয়ে যায়, তবে সুপার টপ-আপ পলিসি কার্যকর হবে। উদাহরণস্বরূপ, ৩ লক্ষ টাকার ডিডাক্টিবল সহ একটি সুপার টপ-আপ থাকলে এবং আপনার খরচ ৭ লক্ষ টাকা হয়, তবে বেসিক প্ল্যান ৩ লক্ষ দেবে এবং সুপার টপ-আপ বাকি ৪ লক্ষ টাকা দেবে। এটি কম খরচে বেশি কভারেজ নিশ্চিত করে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন, প্রিমিয়াম কমান:
স্বাস্থ্য বিমা (Health Insurance) প্ল্যানগুলি ফিটনেস ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসাকে উৎসাহ দেয়, যা প্রিমিয়াম কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ন্যূনতম হাঁটার পরিমাণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সুস্থ বডি মাস ইনডেক্স (BMI) থাকলেও সুবিধা পাওয়া যায়। এতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা কমে, যা সবার জন্যই লাভজনক। স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া এবং শরীরচর্চার অভ্যাস প্রিমিয়াম কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সুরক্ষা দেয়।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা (Health Insurance) শুধু একটি বিকল্প নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। তবে, সঠিক পরিকল্পনা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই খরচ কমানো সম্ভব। তাড়াতাড়ি শুরু করা, প্ল্যান তুলনা, ডিডাক্টিবল-কো-পে বেছে নেওয়া, সুপার টপ-আপ কেনা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মতো পদক্ষেপ প্রবীণদের আর্থিক চাপ কমিয়ে মানসিক শান্তি দেবে। বিমা কেনার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।