বিশ্ববাজার দখল নিতে হলদিরামে বিনিয়োগ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের

ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্যাকেজড ফুড প্রস্তুতকারক হলদিরাম (Haldiram) স্ন্যাকস ফুড প্রাইভেট লিমিটেড সোমবার ঘোষণা করেছে যে আমেরিকার আলফা ওয়েভ গ্লোবাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং…

Haldiram Expands Global Reach with New Investments from US & Middle East"

ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্যাকেজড ফুড প্রস্তুতকারক হলদিরাম (Haldiram) স্ন্যাকস ফুড প্রাইভেট লিমিটেড সোমবার ঘোষণা করেছে যে আমেরিকার আলফা ওয়েভ গ্লোবাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানি (আইএইচসি) তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। এই ঘোষণা এসেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক তেমাসেকের হলদিরামে সংখ্যালঘু শেয়ার অধিগ্রহণের একদিন পর। এই নতুন বিনিয়োগের ফলে হলদিরামের প্রোমোটারদের মোট শেয়ার হ্রাস ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

   

চুক্তির আর্থিক বিবরণ প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়নি। তবে, এই লেনদেনটি নিয়মিত নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের অধীন রয়েছে এবং শীঘ্রই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আলফা ওয়েভ গ্লোবালের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫,১০০ কোটি টাকা হতে পারে, যা হলদিরামের মোট মূল্যায়ন ১০ বিলিয়ন ডলার বা ৮৬,০০০ কোটি টাকার সমান।

Advertisements

হলদিরামের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলফা ওয়েভ গ্লোবাল এবং আইএইচসি-র সমর্থনে কোম্পানি তাদের দক্ষতা এবং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি বাড়াতে চায়, বিশেষ করে আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে। একই সঙ্গে, ভারতীয় বাজারে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে।

হলদিরামের যাত্রা

১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলদিরাম ভারতের অন্যতম বৃহৎ প্যাকেজড ফুড প্রস্তুতকারক। এটি নানা ধরনের স্ন্যাকস, মিষ্টি এবং রেডি-টু-ইট পণ্যের জন্য বিখ্যাত। গঙ্গা ভীষণ আগরওয়াল নামে একজন উদ্যোক্তা রাজস্থানের বিকানেরে একটি ছোট মিষ্টির দোকান হিসেবে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আজ এটি একটি বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে, যার পণ্য ৮০টিরও বেশি দেশে পৌঁছে যায়। হলদিরামের ভুজিয়া, নমকিন, গুলাব জামুন এবং রসগোল্লার মতো পণ্য ভারতীয়দের পাশাপাশি প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তেমাসেকের বিনিয়োগ

সিঙ্গাপুরের তেমাসেক হলদিরামের বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে একটি ইক্যুইটি শেয়ার অধিগ্রহণ করবে। এই চুক্তিও নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তেমাসেক, যার নেট পোর্টফোলিও মূল্য ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ২৮৮ বিলিয়ন ডলার, ভারতের ভোক্তা ও খাদ্য খাতে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করে আসছে। মার্চ মাসে ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশনের (সিসিআই) কাছে তেমাসেকের সাবসিডিয়ারি জংসং ইনভেস্টমেন্টস পিটিই-এর মাধ্যমে প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার পরিকল্পনার জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল।

নতুন বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা

আলফা ওয়েভ গ্লোবাল একটি আমেরিকান বিনিয়োগ সংস্থা, যিনি ভারতের স্টার্টআপ যেমন সুইগি, লেন্সকার্ট এবং ড্রিম১১-এ বিনিয়োগের জন্য পরিচিত। অন্যদিকে, আইএইচসি মধ্যপ্রাচ্যের একটি শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ গ্রুপ, যারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। এই দুই বিনিয়োগকারীর আগমন হলদিরামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক এবং অভিজ্ঞতা কোম্পানিকে আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো লাভজনক বাজারে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে।

বিশ্ববাজারে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা

হলদিরাম ইতিমধ্যে বিশ্বের ৭ মিলিয়নেরও বেশি আউটলেটে তাদের পণ্য বিক্রি করে। আমেরিকায় ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে এর স্ন্যাকস অত্যন্ত জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে ভারতীয় খাবারের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, হলদিরাম একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে চায়। এই নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো, নতুন পণ্য লঞ্চ করা এবং বিপণন কৌশল উন্নত করার পরিকল্পনা করছে।

ভারতের পাশাপাশি, হলদিরামের লক্ষ্য আমেরিকার মূলধারার বাজারে প্রবেশ করা। এর জন্য তারা স্থানীয় স্বাদের সঙ্গে মানানসই পণ্য তৈরি করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে হালাল-প্রত্যয়িত খাবারের চাহিদা রয়েছে, হলদিরাম সেই দিকে মনোযোগ দিতে পারে। এই সম্প্রসারণ কোম্পানির আয় বৃদ্ধি এবং ব্র্যান্ডের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক হবে।

ভারতীয় বাজারে প্রভাব

ভারতের ৬.২ বিলিয়ন ডলারের স্ন্যাকস বাজারে হলদিরামের প্রায় ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এই বিনিয়োগ ভারতীয় বাজারে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও মজবুত করবে। পেপসিকোর লেজ, আইটিসি-র বিঙ্গো এবং বিকাজি ফুডসের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করতে হলদিরাম নতুন পণ্য এবং উন্নত বিপণন কৌশলের উপর জোর দিচ্ছে।

বিনিয়োগের তাৎপর্য

এই বিনিয়োগ ভারতীয় খাদ্য শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক। হলদিরামের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডে বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ভারতের ক্রমবর্ধমান ভোক্তা বাজারের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। এটি অন্যান্য দেশীয় কোম্পানিগুলোকেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে উৎসাহিত করতে পারে।

হলদিরামের ভবিষ্যৎ

হলদিরামের প্রোমোটার আগরওয়াল পরিবার এই বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির প্রথম বাহ্যিক অর্থায়ন গ্রহণ করেছে। এর আগে তারা একটি প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও)-এর কথাও ভেবেছিল। তবে, বর্তমানে তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিলে কোম্পানির সম্প্রসারণে মনোযোগ দিচ্ছে। আগামী ১২-২৪ মাসের মধ্যে একটি আইপিও-এর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রতিযোগিতা এবং চ্যালেঞ্জ

বিশ্ববাজারে প্রবেশের পাশাপাশি হলদিরামকে স্থানীয় প্রতিযোগিতা এবং ভোক্তাদের পরিবর্তিত পছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের চাহিদা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল বিক্রয় চ্যানেলের গুরুত্ব বাড়ার কারণে কোম্পানিকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আলফা ওয়েভ এবং আইএইচসি-র অভিজ্ঞতা এই ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

তেমাসেক, আলফা ওয়েভ গ্লোবাল এবং আইএইচসি-র বিনিয়োগ হলদিরামের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই অর্থায়ন কোম্পানিকে বিশ্ববাজারে একটি শক্তিশালী খাদ্য ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে। ভারতীয় ভোক্তাদের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে একটি দেশীয় ব্র্যান্ড বিশ্ব মঞ্চে এত বড় সাফল্য অর্জন করছে। হলদিরামের এই যাত্রা ভারতের খাদ্য শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।