নয়াদিল্লি: ভারতের আকাঙ্ক্ষিত স্বনির্ভরতার নতুন অধ্যায় শুরু হলো আজ। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) এবং রাশিয়ার ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন (UAC) মস্কোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (MOU) সই করেছে, যার মাধ্যমে এসজে-১০০ নামক যাত্রীবাহী কমিউটার বিমান ভারতে যৌথভাবে তৈরী হবে।
এটি ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ যাত্রীবাহী বিমান দেশীয় ভূমিতে তৈরি হওয়ার ঘোষণা যা সিভিল এভিয়েশন খাতে এয়ারবাস এবং বোয়িং-এর দীর্ঘদিনের একচেটিয়া অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার পথে একটি মাইলফলক। এইচএএলের চেয়ারম্যান অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. ডি.কে. সুনীল এবং ইউএসির ডিরেক্টর জেনারেল ভাদিম বাডেকা-এর উপস্থিতিতে এইচএএলের প্রভাত রঞ্জন এবং ইউএসির ওলেগ বোগোমোলভ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১ নভেম্বর থেকে আধার কার্ডে বড় পরিবর্তন, জেনে নিন নতুন নিয়মগুলি
এই চুক্তি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নয়, বরং ভারত-রাশিয়া মৈত্রীর নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার প্রতীক।এসজে-১০০ বিমানটি একটি টুইন-ইঞ্জিন, ন্যারো-বডি কমিউটার জেট, যা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ২০০-এর বেশি ইউনিট উৎপাদিত হয়েছে এবং ১৬টি কমার্শিয়াল এয়ারলাইনের মাধ্যমে চালু হচ্ছে। এর ডিজাইন এমনভাবে তৈরি যাতে শর্ট-হল এবং রিজিওনাল রুটগুলোতে কার্যকরী হয়, যা ভারতের ইউডান (উডান—উন্নত ডেস্ক বাংলা এ ইয়াত্রা নিম্নায়ম) স্কিমের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায়।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে শুরু হওয়া এই স্কিমের লক্ষ্য টু-থ্রি টায়ার শহরগুলোতে সাশ্রয়ী বিমান চলাচলের সুবিধা প্রদান করা। এইচএএলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এসজে-১০০ ভারতের রিজিওনাল কানেকটিভিটির জন্য গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে।” এই চুক্তির ফলে এইচএএলকে ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য এই বিমান উৎপাদনের অধিকার দেওয়া হবে, যা দেশীয় সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করবে এবং হাজার হাজার চাকরির সৃষ্টি করবে।
ভারতের সিভিল এভিয়েশন ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। গতবার ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এইচএএল এভ্রো এইচএস-৭৪৮ বিমান উৎপাদন করেছিল, কিন্তু তারপর থেকে দেশে কোনো সম্পূর্ণ যাত্রীবাহী বিমান তৈরির প্রকল্প হয়নি। এই ফাঁকা সময়ে ভারতীয় বাজার এয়ারবাস এবং বোয়িং-এর দুই জায়ান্টের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা আমদানি খরচ বাড়িয়েছে এবং প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এখন এই এমওইউ-এর মাধ্যমে ভারত সেই একচেটিয়া অবস্থান ভাঙার দিকে এগোচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, পরবর্তী এক দশকে ভারতের এভিয়েশন খাতে ২০০-এর বেশি এই ধরনের ন্যারো-বডি জেটের চাহিদা থাকবে, যা রিজিওনাল রুটগুলোর জন্য অপরিহার্য।
এছাড়া, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলোর জন্য আরও ৩৫০টি বিমানের প্রয়োজন হবে। এইচএএলের মতে, এই উৎপাদন প্রকল্প আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে বেরিয়ে সিভিল এভিয়েশনে দেশীয় ক্ষমতা বাড়াবে।


