রফতানিতে শীর্ষে গুজরাত, কত নম্বরে বাংলা?

ভারতের রাজ্যগুলির রফতানি পরিসংখ্যান (এপ্রিল ২০২৪ – ফেব্রুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী, আবারও রফতানিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে গুজরাত (Gujarat)। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘নির্যাত’…

Gujarat port

ভারতের রাজ্যগুলির রফতানি পরিসংখ্যান (এপ্রিল ২০২৪ – ফেব্রুয়ারি ২০২৫) অনুযায়ী, আবারও রফতানিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে গুজরাত (Gujarat)। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘নির্যাত’ (NIRYAT) পোর্টালের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে গুজরাত এককভাবে $১০৬.২ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, যা দেশের সামগ্রিক রফতানির বিশাল একটি অংশ।

এই তালিকায় গুজরাতের পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র, যার রফতানি মূল্য $৫৯.৩ বিলিয়ন। এরপর তৃতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু ($৪৬.৫ বিলিয়ন), চতুর্থ স্থানে কর্ণাটক ($২৭.১ বিলিয়ন), এবং পঞ্চম স্থানে উত্তরপ্রদেশ ($১৯.৭ বিলিয়ন)।

এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান অনেক পিছনে—নবম স্থানে। বাংলা এই সময়কালে $১১.৩ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। দেশের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে, এই অবস্থান নিঃসন্দেহে হতাশাজনক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি অন্ধ্রপ্রদেশ ($১৮.৬ বিলিয়ন), তেলেঙ্গানা ($১৭.৩ বিলিয়ন) এবং হরিয়ানা ($১৭.১ বিলিয়ন)-এর মতো রাজ্যগুলোও রফতানিতে বাংলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

অনেকেই মনে করছেন, রফতানির এই খারাপ পারফরম্যান্সের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ—বিশেষ করে পরিকাঠামোগত দুর্বলতা, দীর্ঘসূত্রিতা, শিল্পবান্ধব নীতি না থাকা এবং উৎপাদন ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা। যদিও কলকাতা বন্দরের অবস্থান এবং পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান রয়েছে, তবুও এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যে পণ্য উৎপাদনের ভিত্তি আরও মজবুত না হলে, রফতানিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব নয়। কৃষিপণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, হস্তশিল্প ও কিছু হালকা শিল্পজাত পণ্য বাংলা থেকে রফতানি হয় বটে, কিন্তু বৃহৎ শিল্প ও হাই-টেক পণ্যের উৎপাদনে এখনও পিছিয়ে রয়েছে রাজ্যটি।

Advertisements

অন্যদিকে গুজরাতের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সুসংহত শিল্প পরিকাঠামো, মাল্টিমোডাল পরিবহণ ব্যবস্থা, এবং সরকারি নীতির স্পষ্টতা ও সহায়ক মনোভাব। কেমিক্যাল, পেট্রোকেমিক্যাল, টেক্সটাইল, এবং ডায়মন্ড প্রসেসিং-এর মতো সেক্টরগুলো গুজরাতে ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছে, যা রফতানিকে শক্তিশালী করেছে।

বাংলার শিল্পনীতি ও রফতানি সংক্রান্ত পরিকল্পনাকে আরও বাস্তবমুখী ও দীর্ঘমেয়াদি করে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক শিল্পপার্ক এবং রফতানি সহায়ক প্রকল্প চালু করেছে, তবে তার বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে, পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মধ্যে ওডিশা $৯.১ বিলিয়ন এবং বিহার $১.৮৭ বিলিয়ন রফতানি করেছে। ছোট রাজ্য হলেও গোয়া ($২.২ বিলিয়ন) এবং হিমাচল প্রদেশ ($২.২ বিলিয়ন) বাংলা থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই, যা বাংলার জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই ধরা যায়।
বাংলার রফতানি সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে, তবে তার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, শিল্পবান্ধব পরিবেশ এবং সরকারি সদিচ্ছা। তা না হলে রফতানির দৌড়ে বাংলা আরও পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।