জিএসটি সংস্কার নিয়ে আর কোনো দ্বিমত নেই, দাবি অর্থমন্ত্রীর

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কারের (GST reforms) ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার এনডিটিভির এক শীর্ষ…

Modi Govt’s Reforms Strengthen India’s Economy, Says Finance Minister Nirmala Sitharaman

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কারের (GST reforms) ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার এনডিটিভির এক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি জানালেন, প্রায় ১৮ মাসের দীর্ঘ আলোচনার পর জিএসটির স্ল্যাব সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র দুটি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার প্রিমিয়ামকেও করছাড়ের আওতায় আনা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর কথায়, এই পদক্ষেপ হঠাৎ করে নেওয়া নয়, বরং বহুদিন ধরে প্রস্তুতি চলছিল। এমনকি গত বছরের কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে সাধারণ মানুষের জন্য কর-সহায়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। “প্রধানমন্ত্রী আমাকে বারবার মনে করিয়েছিলেন, কর ব্যবস্থার সংস্কারে সাধারণ মধ্যবিত্তের স্বস্তি দেওয়া জরুরি,” বলেন সীতারামন।

   

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সীতারামন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জিএসটি স্ল্যাব সংস্কার সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। “আমরা অনেক আগে থেকেই এই প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি। ট্রাম্পের ঘোষণার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র নেই,” তিনি বলেন।

গত বাজেটে মধ্যবিত্ত বেতনের শ্রেণির জন্য বড় করছাড় ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কারী ব্যক্তিরা আয়করে উল্লেখযোগ্য ছাড় পান। এবার জিএসটি স্ল্যাব কমানোর মাধ্যমে আবারও সাধারণ মানুষকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার বার্তা দিলেন সীতারামন। বিশেষত স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার প্রিমিয়ামে ছাড় দেওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির মাসিক খরচে স্বস্তি আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এই সংস্কার কার্যকর করার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাজ্য সরকারগুলিকে একমত করানো। ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠককে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা ছিল। রাজ্যগুলির একটি বড় অংশ রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা তুলে ধরেছিল এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে নতুন ‘সিন ট্যাক্স’ আরোপের কথাও বলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলে যায়। নির্ধারিত দু’দিনের বৈঠক মাত্র এক দিনেই শেষ হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সীতারামন বলেন, “ন্যায্যতা বজায় রাখতে হলে রাজ্য অর্থমন্ত্রীদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। তারা সবাই হারে হারে রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও হারের যুক্তিকরণে সায় দিয়েছেন।”

তবে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, ২০২২ সালের পর থেকে রাজ্যগুলিকে আলাদা করে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। পূর্বে জিএসটি কাঠামোর অংশ ছিল ‘কম্পেনসেশন সেস’, যার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ রাজ্যগুলিকে সমানুপাতিক হারে প্রদান করা হতো। বর্তমানে যে সেস আদায় হচ্ছে, তা কোভিডের সময় নেওয়া ঋণ শোধ করতেই ব্যবহার হচ্ছে।

Advertisements

“আজ যে সেস আদায় হচ্ছে, তা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কোভিড ঋণ পরিশোধে কাজে লাগবে। রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো কেন্দ্রের কাছে আলাদা কোনো তহবিল নেই,” বলেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর মতে, রাজস্ব বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর সংগ্রহের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। “সংগ্রহ বাড়লে রাজস্বও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে কেন্দ্র বড় স্যুটকেস ভর্তি টাকা নিয়ে বসে আছে এবং সেখান থেকে রাজ্যগুলিকে দেওয়া হবে,” তিনি ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটি স্ল্যাব সংখ্যা হ্রাস করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জটিলতা অনেকটা কমবে। কর কাঠামোর স্বচ্ছতা বাড়বে এবং করদাতারা সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে বিমা প্রিমিয়ামে ছাড় দেওয়ায় বিমা ক্ষেত্রের প্রসার ঘটতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।

অন্যদিকে, রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা এখনও থেকে যাচ্ছে। কারণ, অনেক পণ্য ও পরিষেবা কম হারে ট্যাক্সের আওতায় চলে যাওয়ায় রাজ্যগুলির কর আদায়ে ধাক্কা লাগতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় বজায় রাখা ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সাম্প্রতিক ঘোষণা নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা বহন করছে। তবে রাজ্যগুলির আর্থিক দাবি-দাওয়া, ক্ষতিপূরণ না মেলার হতাশা এবং কর সংগ্রহে অদক্ষতা—সবকিছুই এই নতুন কাঠামো কার্যকর করার পথে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন দেখার বিষয়, প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ঘোষিত এই জিএসটি সংস্কার বাস্তবে কতটা সফল হয় এবং দেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।