১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জিএসটি সংস্কার কার্যকর করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি “নতুন প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার” আনার ইঙ্গিত দেওয়ার পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা দেশের কর কাঠামো নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মোদীর দাবি, এই প্রস্তাবিত সংস্কার দেশের সাধারণ নাগরিককে দ্বিগুণ সুবিধা দেবে। একদিকে কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বাড়বে, অন্যদিকে ব্যবসা ও শিল্পক্ষেত্রের জন্য সহজতর হবে কর প্রদানের প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার বলেন, “পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার গোটা দেশের নাগরিকদের দ্বিগুণ সুবিধা এনে দেবে। আমাদের কাছে সংস্কার মানে হচ্ছে সুশাসনের বিস্তার। তাই রাজ্যগুলিরও উচিত কেন্দ্রের এই উদ্যোগে পূর্ণ সহযোগিতা করা।” কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, এই সংস্কারের ফলে শুধু করের বোঝাই হালকা হবে না, বরং জিএসটি কাঠামো হবে আরও সহজ, স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদী বলেন, “আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার আনছি। এর ফলে দেশের সর্বত্র করের বোঝা কমবে।”
এর পরদিনই অর্থ মন্ত্রক একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে জানায়, কেন্দ্র জিএসটির বর্তমান হারগুলিকে সরলীকরণের পথে হাঁটতে চলেছে। মন্ত্রকের প্রস্তাব অনুযায়ী, কর কাঠামোকে দুটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হবে—‘স্ট্যান্ডার্ড’ এবং ‘মেরিট’। কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ পণ্যের উপর বাড়তি কর আরোপ করা হবে।
২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে কার্যকর জিএসটি হারগুলি হলো—৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। সোনা-রুপোর মতো কিছু পণ্য এই তালিকার বাইরে রয়েছে। আবার মদ, পেট্রোল-ডিজেল ইত্যাদি এক্সসাইজ শুল্কের আওতায় পড়ে। বিলাসবহুল গাড়ি, সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়।
অর্থ মন্ত্রক মনে করছে, চারটি পৃথক কর স্ল্যাবকে সংকুচিত করে মাত্র দুটি স্তরে আনা গেলে, কর প্রদানে বিভ্রান্তি কমবে এবং সাধারণ মানুষেরও বোঝা হালকা হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্র একা এই সংস্কার কার্যকর করতে পারবে না। এর জন্য রাজ্যগুলির সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। কেননা জিএসটি হলো কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের যৌথ কর কাঠামো।
জিএসটি কাউন্সিল, যেখানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা সদস্য হিসেবে থাকেন, সেই সংস্থা চূড়ান্তভাবে এই সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন করবে।
অর্থ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, জিএসটি সংস্কার ও হার পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ ইতিমধ্যেই মন্ত্রিগোষ্ঠী (Group of Ministers বা GoM)-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই প্রস্তাব জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে পেশ করবে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই এই আলোচনা শেষ করে চলতি অর্থবর্ষেই সংস্কার কার্যকর করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে চারটি আলাদা স্ল্যাবের কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। একই ধরনের জিনিসে আলাদা করহার লাগু হওয়ায় অস্বচ্ছ পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাশাপাশি, একাধিক স্ল্যাবের কারণে কর ফাঁকি ও হিসাবনিকাশে জটিলতা বেড়ে যায়।
সরকার মনে করছে, মাত্র দুটি স্ল্যাবে কর ভাগ করলে সহজ হবে ব্যবসা, আর বাড়বে কর আদায়ের স্বচ্ছতা। ভোক্তারাও সহজে বুঝতে পারবেন কোন পণ্যে কত কর আরোপ হচ্ছে।
যদিও এখনো চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি, তবু অর্থ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সাধারণ ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন—বস্ত্র, প্যাকেটজাত খাবার, গৃহস্থালির জিনিস ইত্যাদিতে কর কমতে পারে। অন্যদিকে বিলাসবহুল দ্রব্য ও ‘সিন’ প্রোডাক্টস, যেমন—তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল, বিলাসবহুল গাড়ি প্রভৃতিতে বাড়তি কর বজায় রাখা হবে।
মোদীর এই ঘোষণায় নাগরিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষত মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এই সংস্কার বড় স্বস্তি আনতে পারে। কর প্রদানের সহজ নিয়ম ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশকেও চাঙ্গা করবে।
অর্থ মন্ত্রক বলেছে, “সরকার জিএসটিকে একটি সহজ, স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ করব্যবস্থায় রূপান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নাগরিকদের উপকারে এবং ব্যবসার সুবিধার্থে আমরা সংস্কার কার্যকর করার পথে দ্রুত এগোচ্ছি।”
ভারতের কর সংস্কারের ইতিহাসে জিএসটি ইতিমধ্যেই এক বড় পদক্ষেপ। এবার সেই ব্যবস্থাকেই আরও সরল ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, রাজ্য সরকারগুলি যদি এই পদক্ষেপে সহমত হয়, তবে শীঘ্রই দেশবাসী পেতে চলেছেন “দ্বিগুণ সুবিধা”।