নতুন প্রজন্মের জিএসটি (GST) সংস্কারকে কেন্দ্র করে বুধবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করলেন, আসন্ন পরিবর্তনগুলি দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা ঢালবে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে, যা আগে কর বাবদ সরকারকে জমা দিতে হত।
জিএসটি ব্যবস্থায় মাত্র দুটি স্ল্যাব
অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলা নতুন জিএসটি ব্যবস্থায় মাত্র দুটি স্ল্যাব থাকবে— ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। এতদিন যে চারটি স্ল্যাব (৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশ) চালু ছিল, তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই স্ল্যাব হ্রাসের ফলে সাধারণ মানুষের করভার কমবে বলেই সরকারের আশা।
সীতারামন বলেন, “১২ শতাংশ জিএসটি স্ল্যাবের অন্তর্গত প্রায় ৯৯ শতাংশ পণ্যকে ৫ শতাংশ হারে নামিয়ে আনা হয়েছে। আবার ২৮ শতাংশ স্ল্যাবের প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্যকে ১৮ শতাংশে আনা হয়েছে। এর ফলে সরাসরি ভোক্তারা লাভবান হবেন।” তিনি আরও যোগ করেন, বেশ কিছু FMCG সংস্থা ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় দামের কাটছাঁট শুরু করেছে যাতে ভোক্তারা নতুন কর কাঠামোর সুফল অবিলম্বে পান।
অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, নতুন স্ল্যাব প্রবর্তনের আগে সরকার পাঁচটি মূল দিককে গুরুত্ব দিয়েছে—
১. গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির করের বোঝা হ্রাস করা
২. মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা
৩. কৃষক সমাজকে লাভবান করা
৪. ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) খাতে সহায়তা প্রদান
৫. কর্মসংস্থান ও রপ্তানির সুযোগ তৈরি করে এমন খাতগুলিকে সুবিধা দেওয়া
তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, জিএসটি চালুর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭.১৯ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। একইভাবে করদাতার সংখ্যা ৬৫ লক্ষ থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১.৫১ কোটিতে।
অর্থমন্ত্রী জিএসটি কাউন্সিলকে “সহযোগী ফেডারেলিজমের উজ্জ্বল উদাহরণ” বলে আখ্যা দেন। তিনি জানান, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এমন একটি সাংবিধানিক সংস্থা গঠিত হয়েছে, যা কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের অংশগ্রহণে কাজ করে।
প্রাক্তন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কর কাঠামোকে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “ওই সময়ে ছিল ‘ট্যাক্স টেররিজম’। ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা জিএসটি আনতে পারেনি, রাজ্যগুলিকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, এনডিএ সরকারের প্রচুর প্রচেষ্টা ও আলোচনা ফলেই আজ এক দেশ-এক কর (One Nation-One Tax) সম্ভব হয়েছে।
নতুন ব্যবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা— সকলে সুফল পাবেন বলে সরকার দাবি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ভোক্তাদের হাতে খরচ করার মতো বাড়তি টাকা থাকবে, যা বাজারে চাহিদা বাড়াবে। ফলত শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক অর্থনীতির গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর এই নতুন স্ল্যাব ব্যবস্থা ভারতের জিএসটি ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। সরকারের আশা, এই সংস্কার শুধু অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ‘বৃদ্ধির ইঞ্জিন’ হিসেবেও কাজ করবে।