জিএসটি সংস্কারে কৃষি, দুগ্ধ ও সমবায় খাতে নতুন দিগন্ত

এই সপ্তাহে ঘোষিত ব্যাপক জিএসটি সংস্কারকে কেন্দ্র সরকার দেশের সমবায় খাতের জন্য এক গেম-চেঞ্জার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সমবায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন কর কাঠামো সমবায় উৎপাদনকে…

Impact of GST changes

এই সপ্তাহে ঘোষিত ব্যাপক জিএসটি সংস্কারকে কেন্দ্র সরকার দেশের সমবায় খাতের জন্য এক গেম-চেঞ্জার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সমবায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন কর কাঠামো সমবায় উৎপাদনকে প্রতিযোগিতামূলক করবে, তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়াবে এবং কৃষক ও সমবায় সংগঠনের আয় বৃদ্ধি করবে।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন সংস্কার গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সমবায়গুলিকে শক্তিশালী করবে এবং কোটি কোটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী করবে। পশুপালন ও কৃষি সমবায়ের জন্য জিএসটি হ্রাস সরাসরি স্বস্তি দেবে ছোট কৃষক ও কৃষক উৎপাদক সংগঠনগুলোকে (FPOs)।

   

সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভাষায়—“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বে চালু হওয়া নেক্সটজেন জিএসটি সংস্কার গোটা দুগ্ধ সমবায় খাতের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এমনকি আমুলের মতো বড় ব্র্যান্ডও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।”

দুধ ও পনির: ব্র্যান্ডেড বা আনব্র্যান্ডেড—দুটোই জিএসটি থেকে অব্যাহতি।
মাখন, ঘি প্রভৃতি: করহার ১২% থেকে কমিয়ে ৫%।
লোহার, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের দুধের ক্যান: জিএসটি ১২% থেকে ৫%-এ নামানো হয়েছে।

এতে একদিকে ভোক্তাদের জন্য দুধজাত পণ্য সাশ্রয়ী হবে, অন্যদিকে দুগ্ধ কৃষকরা সরাসরি আর্থিক স্বস্তি পাবেন। মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি বিশেষত গ্রামীণ মহিলাদের নেতৃত্বাধীন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে (SHGs) শক্তিশালী করবে, যারা দুধ প্রক্রিয়াকরণে জড়িত।

পাশাপাশি, সাশ্রয়ী দুগ্ধপণ্য ঘরে ঘরে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং প্রোটিন ও ফ্যাটের গুরুত্বপূর্ণ উৎস সহজলভ্য করবে।

অনেক জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যে করহার হ্রাস পেয়েছে—
চিজ, নাস্তা (নমকিন), মাখন ও পাস্তা: জিএসটি ১২% বা ১৮% থেকে কমে ৫%।
জ্যাম, জেলি, ইস্ট, ভুজিয়া ও ফলের রস ভিত্তিক পানীয়: এখন ৫% করের আওতায়।
চকোলেট, কর্নফ্লেক্স, আইসক্রিম, কেক, বিস্কুট, কফি: করহার ১৮% থেকে নামিয়ে ৫%।
ফলে গ্রামীণ ও আধা-শহরাঞ্চলে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে, পরিবারগুলির ব্যয় কমবে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও দুগ্ধ সমবায় খাত আরও শক্তিশালী হবে।
ট্রাক্টর (১৮০০ সিসি-র নিচে): জিএসটি কমে ৫%।

Advertisements

ট্রাক্টরের যন্ত্রাংশ (টায়ার, টিউব, হাইড্রোলিক পাম্প প্রভৃতি): ১৮% থেকে ৫%-এ নামানো হয়েছে।
সারের কাঁচামাল (অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড): ১৮% থেকে ৫%।

এতে সার উৎপাদকদের খরচ কমবে এবং কৃষকদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে সার পৌঁছাবে। ফলে বপন মৌসুমে সময়মতো সার মজুত নিশ্চিত হবে।

১২টি জৈব কীটনাশক ও কয়েকটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট: জিএসটি ১২% থেকে কমে ৫%।
এতে জৈব কৃষক ও এফপিওরা সরাসরি উপকৃত হবেন। পরিবেশবান্ধব কৃষি, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের “ন্যাচারাল ফার্মিং মিশন”-এর সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ।

বাণিজ্যিক পণ্যবাহী যানবাহন (ট্রাক, ডেলিভারি ভ্যান): জিএসটি ২৮% থেকে কমিয়ে ১৮%।
গুডস ক্যারেজের তৃতীয় পক্ষ বিমা: ১২% থেকে ৫% (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটসহ)।

এতে ট্রাক কেনার প্রাথমিক খরচ কমবে, ফলে পরিবহণ ব্যয় কমে আসবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতে মোট পণ্য পরিবহণের প্রায় ৬৫-৭০% ট্রাকে হয়। করছাড়ের ফলে প্রতি টন প্রতি কিলোমিটার ভাড়া কমবে এবং কৃষিজাত পণ্যের সরবরাহ আরও সাশ্রয়ী হবে।

মন্ত্রণালয়ের মতে, এই জিএসটি সংস্কার একদিকে নাগরিকদের করের বোঝা হালকা করবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। সরকারের ভাষায়, এটি দেশের জন্য একপ্রকার “দীপাবলির উপহার”।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে কর সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মাত্র কয়েকদিন পরেই জিএসটি কাউন্সিলের অনুমোদিত এই ব্যাপক সংস্কার কার্যকর হলো।