জিএসটি হার আরও কমানোর বার্তা সীতাারামনের

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতাারামন শনিবার ঘোষণা করেছেন যে, জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) হার আরও কমবে এবং কর স্ল্যাবের পর্যালোচনার প্রক্রিয়া “প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে” পৌঁছেছে। ২০১৭…

gst-rates-to-reduce-further-message-from-sitharaman

short-samachar

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতাারামন শনিবার ঘোষণা করেছেন যে, জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) হার আরও কমবে এবং কর স্ল্যাবের পর্যালোচনার প্রক্রিয়া “প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে” পৌঁছেছে। ২০১৭ সালে জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে করের হার ধারাবাহিকভাবে কমানো হয়েছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে রাজস্ব নিরপেক্ষ হার (RNR) ১৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ১১.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখন, অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, এই হার আরও কমানো হবে, যা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।

   

শুক্রবার দ্য ইকোনমিক টাইমস অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সীতাারামন বলেন, “এখন, এই পর্যায়ে, আমি একবার পুনরায় সমস্ত গোষ্ঠী কাজ পর্যালোচনা করছি। গোষ্ঠীগুলি (GoM) দুর্দান্ত কাজ করেছে, তবে আমি এটি নিজের দায়িত্বে সম্পূর্ণভাবে পর্যালোচনা করছি এবং পরে সম্ভবত এটি কাউন্সিলের কাছে নিয়ে যাব, যাতে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি।”

অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্যগুলি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া একটি ব্যাপক পর্যালোচনা প্রক্রিয়া থেকে এসেছে, যেখানে জিএসটি কাউন্সিল ছয়টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি গোষ্ঠী গঠন করে। এই গোষ্ঠীর কাজ ছিল জিএসটি হার কমানো এবং স্ল্যাবগুলির পরিবর্তন নিয়ে সুপারিশ করা। এটি ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী এবং কার্যকরভাবে তৈরি করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১৭ সালে জিএসটি চালুর সময় রাজস্ব নিরপেক্ষ হার ছিল ১৫.৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের মধ্যে ১১.৪ শতাংশে কমে গেছে। সীতাারামন আরও বলেছেন, “এটি আরও কমবে।” অর্থাৎ, ভবিষ্যতে আরও কম হারে জিএসটি বসানো হতে পারে, যা ব্যবসায়ীদের করের চাপ কমাবে এবং দেশে ব্যবসা করতে আরও সহজ হবে।

এই পদক্ষেপটি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য ভারতের পরোক্ষ কর কাঠামোকে আরো সহজ এবং স্বচ্ছ করা। সীতাারামন বলেন, “এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আমরা কর স্ল্যাবগুলি রেশনালাইজ করছি, যা শুধু কর আদায়ের সহজতর করবে না, বরং ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক এবং সহজ কর ব্যবস্থাও তৈরি করবে।”

একই সময়ে, সীতাারামন তার বক্তৃতায় বাজারের অস্থিরতা নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এটা যেমন প্রশ্ন করা, পৃথিবী কি শান্ত হবে, যুদ্ধ কি শেষ হবে, লাল সাগর কি নিরাপদ থাকবে, জলদস্যু কি থাকবে? আমি বা আপনি এর বিষয়ে কিছু বলতে পারি না।” এই মন্তব্যটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সরকারের আরেকটি বড় উদ্যোগ হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলিতে খুচরো বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো। সীতাারামন বলেন, “আমরা চাই আরও খুচরো বিনিয়োগকারীরা সরকারি ব্যাংকগুলিতে অংশগ্রহণ করুক।” এর মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হল ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা, যাতে আরও বেশি মানুষ এই খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।

এছাড়া, ডিজিটালাইজেশন এবং কর ব্যবস্থার সরলীকরণের মাধ্যমে সরকারের প্রচেষ্টা ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। এতে ব্যবসায়ীদের জন্য সিস্টেম আরও সহজ হবে, কর পরিশোধের প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সুনির্দিষ্ট হবে, এবং নতুন বিনিয়োগকে আকর্ষণ করা সম্ভব হবে।

অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার পরিকল্পনা করছে যাতে কর পর্যালোচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এই পরিবর্তনগুলি খুব শীঘ্রই কার্যকর করা হয়। তিনি বলেছেন, “আমরা এখন এমন একটি স্তরে আছি, যেখানে আমাদের কাছে আরেকটি সুযোগ রয়েছে পর্যালোচনা করার। তারপর সম্ভবত আমরা এগুলি জিএসটি কাউন্সিলের কাছে নিয়ে যাব এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাব।”

তবে, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ভারতের কর কাঠামো আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল এবং সহজ হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, কর হার কমানোর এই উদ্যোগ দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি ঘটাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

এছাড়া, জিএসটি কাউন্সিলের পর্যালোচনা এবং প্রস্তাবনার কাজ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নজর রাখা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এবং দেশীয় ব্যবসায়ীরা এই কর কাঠামো পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উচ্চ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের কর সংস্কারের লক্ষ্য শুধু দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা নয়, বরং বিদেশি বিনিয়োগকেও আকৃষ্ট করা। সরকারের এই পদক্ষেপগুলি পরবর্তী সময়ে ভারতের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা তৈরি করবে।