৯৯% পণ্যে জিএসটি নামল ৫% স্ল্যাবে, ঘোষণা করলেন নির্মলা সীতারামন

চেন্নাই, ১৪ সেপ্টেম্বর: ভারতের কর ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)-এর ব্যাপক সংস্কার ঘোষণা করেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা…

GST Council meeting reforms

চেন্নাই, ১৪ সেপ্টেম্বর: ভারতের কর ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)-এর ব্যাপক সংস্কার ঘোষণা করেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রবিবার তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে বাণিজ্য ও শিল্প সংগঠনের যৌথ সম্মেলনে বলেন, “যে সমস্ত পণ্য আগে ১২ শতাংশ জিএসটি-র আওতায় ছিল, তার মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশকেই এখন ৫ শতাংশ জিএসটি স্ল্যাবে নামিয়ে আনা হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী জানান, জিএসটি কাউন্সিলের ৫৬তম বৈঠকে এই বড় সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে, যেখানে সমস্ত রাজ্যের সম্মতিও ছিল। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর, নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই নতুন করহার কার্যকর হবে। এর ফলে দীপাবলির আগেই ভোক্তারা সরাসরি স্বস্তি পাবেন।

   

চার স্তরের পরিবর্তন, এখন মাত্র দুই প্রধান হার:
২০১৭ সালে চালু হওয়া জিএসটি ছিল চারটি মূল স্ল্যাব—৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%। এবার সেই কাঠামোকে সরলীকরণ করে দুটি প্রধান স্ল্যাব রাখা হয়েছে—৫% (মেরিট রেট) এবং ১৮% (স্ট্যান্ডার্ড রেট)। এছাড়াও বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের জন্য ৪০% বিশেষ হার বহাল থাকছে। সরকার এটিকে বলছে “নেক্সট-জেনারেশন জিএসটি র‍্যাশনালাইজেশন”।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ৩৫০-রও বেশি পণ্যের উপর কর কমানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য, গৃহস্থালি পণ্য এবং হস্তশিল্প সামগ্রী যেমন তাঞ্জাভুর পুতুল। কিছু ক্ষেত্রে করহার ১৮% থেকে ৫%-এ নামানো হয়েছে, আবার কিছু পণ্য ১২% থেকে শূন্যে নামানো হয়েছে।

নাগরিকদের জন্য স্বস্তি, অর্থনীতির জন্য গতি:
সীতারামন জানান, “জিএসটি নাগরিকদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিসকে প্রভাবিত করে। কর কমলে সরাসরি ভোক্তারা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি চাহিদা বাড়বে, যা দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে জিএসটি-তে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৬৫ লক্ষ। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৫১ কোটিতে। “যদি জিএসটি সত্যিই ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’ হত, তবে করদাতার সংখ্যা এতটা বাড়ত না,” বলে সমালোচকদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়াও ছোট ব্যবসায়ীদের রিফান্ড সমস্যার সমাধানে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৯০ শতাংশ রিফান্ড দ্রুত দেওয়া হচ্ছে, মাত্র ১০ শতাংশ যাচাইয়ের জন্য রাখা হয়।

তামিলনাড়ুর জন্য বিশেষ গুরুত্ব:
চেন্নাইয়ের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুর শিল্প, হস্তশিল্প, কৃষি এবং খাদ্য খাত এই সংস্কারের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা পাবে।”

Advertisements

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ু বিজেপি সভাপতি নৈনার নাগেন্দ্রন, ফেডারেশন অব তামিলনাড়ু ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিক্রমরাজা, আইআইটি-মাদ্রাজ পরিচালক কমাকোটি সহ বহু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি।

আইআইটি-মাদ্রাজের পরিচালক কমাকোটি জানান, গবেষণা তহবিলে জিএসটি মওকুফ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি করছাড়ের কারণে ভোক্তা পণ্য যেমন টিভি, ওয়াশিং মেশিন ও ছোট গাড়ির চাহিদা বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ফেডারেশন অব তামিলনাড়ু ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিক্রমরাজা বলেন, “গ্রোসারির উপর জিএসটি ১৮% থেকে ৫%-এ নামানোয় আমরা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ:
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, জিএসটি সংস্কার শুধু করহার কমানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর মাধ্যমে আস্থা গড়ে তোলা, ভোগ বাড়ানো এবং ভারতের ২০৪৭ সালের ভিশন পূরণের পথে অগ্রসর হওয়াই মূল উদ্দেশ্য।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME), খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবার ক্ষেত্রে আরও সংস্কার চালিয়ে যাওয়া হবে।

নৈনার নাগেন্দ্রন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। “জিএসটি করহারে এই পরিবর্তন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং ভোক্তা পণ্যের চাহিদা বাড়াবে। দোকানদারদের উচিত নতুন ও পুরনো দামের তালিকা খোলাখুলি প্রদর্শন করা,” তিনি জানান।

শেষ কথা:
এই ঐতিহাসিক কর সংস্কার নিঃসন্দেহে ভারতের ১.৪ বিলিয়ন নাগরিকের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। একদিকে যেমন ভোক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে স্বস্তি পাবেন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রেও আসবে গতি। সরকারের আশা, এই পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং “উদীয়মান ভারতের” পথে এগিয়ে নেবে।