ধনতেরাসের দিন শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, জিএসটি হ্রাসের সুফল এখন প্রকৃত অর্থেই পৌঁছচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। ৫৪টি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দামের উপর নজর রেখে সরকার নিশ্চিত করছে যে, করছাড়ের সুবিধা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দামে ছাড় মিলেছে, দাবি অর্থমন্ত্রীর।
নয়াদিল্লিতে আয়োজিত ‘জিএসটি বচত উৎসব’ সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। অর্থমন্ত্রী বলেন, “জিএসটি হ্রাসের ফলে ভোক্তারা প্রত্যাশিত ছাড়ই নয়, তার থেকেও বেশি সুফল পেয়েছেন। সরকার ৫৪টি আবশ্যিক পণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করেছে এবং দেখা গিয়েছে, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই করছাড়ের সুবিধা শেষ পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে ক্রেতাদের কাছে।”
বিক্রি বেড়েছে টিভি থেকে ফ্রিজে
অর্থমন্ত্রী জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ ৯ দিনে গাড়ি বিক্রিতে নজিরবিহীন উত্থান হয়েছে। যাত্রীবাহী গাড়ির ডিসপ্যাচ ছুঁয়েছে ৩.৭২ লক্ষ ইউনিট, দুই চাকার গাড়ির বিক্রি ২১.৬০ লক্ষ ইউনিট, তিন চাকার গাড়িতে বার্ষিক বৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, জিএসটি রেট র্যাশনালাইজেশনের প্রভাবে টেলিভিশন বিক্রিতে ৩০–৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, এয়ার কন্ডিশনার বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ। নবরাত্রির প্রথম দিনেই এলজি ইন্ডিয়ার বিক্রি ছিল “অভূতপূর্ব”, জানান সীতারামন।
পীযূষ গয়ালের দাবি: ভারতের জিএসটি ২.০ বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত GST Cut Benefits Consumers
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রায় দেড় বছরের পরিশ্রমে নতুন জিএসটি কাঠামো তৈরি হয়েছে। এটি শুধু করব্যবস্থা নয়, বরং ভারতের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার।” তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে দ্বিমুখী প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি- অবকাঠামো বিনিয়োগ ও ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি, যা ভারতের প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। “এই কারণেই ভারত এখনও বিশ্বের দ্রুততম বিকাশমান অর্থনীতির একটি,” বলেন গয়াল। “আইএমএফ আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৬ শতাংশে উন্নীত করেছে।”
অশ্বিনী বৈষ্ণবের তথ্য: ইলেকট্রনিক্স বিক্রিতে রেকর্ড, খাদ্যদ্রব্যে মুদ্রাস্ফীতি কমেছে
আইটি ও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, এই নবরাত্রিতে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২০–২৫ শতাংশ বেশি। “টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, স্মার্টফোন-সব ক্ষেত্রেই রেকর্ড বিক্রি হয়েছে, যা ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে নতুন গতি এনেছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, খাদ্যদ্রব্যের দাম চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে, মুদ্রাস্ফীতিতে ২ শতাংশ পতন ঘটেছে। “এই নতুন অর্থনৈতিক পরিবেশ আজ প্রত্যেক পরিবারের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে,” বলেন বৈষ্ণব।
করছাড়ে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়
অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের কেন্দ্রীয় জিএসটি অঞ্চলের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, করছাড়ের ফলে পণ্যমূল্য ৫ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি।
ইতিমধ্যে ভোক্তা বিষয়ক দফতরে মোট ৩,১৬৯টি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে ৩,০৭৫টি মামলা সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC)-এ পাঠানো হয়েছে এবং ৯৪টি অভিযোগ দফতর থেকেই নিষ্পত্তি হয়েছে।
২০২৫: ভারতের ভোক্তা অর্থনীতির মোড় ঘোরানো বছর
অর্থমন্ত্রীদের মতে, জিএসটি সংস্কার শুধু করছাড় নয়, এটি ভারতের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতা ও উৎপাদনশীল অর্থনীতির প্রতীক। ধনতেরাসের এই দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা স্পষ্ট, “সঞ্চয়, স্বদেশি ও স্বনির্ভরতার পথেই বিকশিত ভারত।”