কলকাতা: বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের আগে বিরোধী শাসিত আটটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত জিএসটি সংস্কারের ফলে রাজস্ব ক্ষতি হলে তার পূর্ণ ক্ষতিপূরণ কেন্দ্র সরকারকে বহন করতে হবে।
হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরালা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গ- এই আটটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। গত সপ্তাহেই তারা প্রাথমিক আলোচনায় বসেছিলেন, আর এদিন সেই আলোচনার ভিত্তিতে একটি যৌথ অবস্থান স্পষ্ট করেন।
রাজ্যে অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি
ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রী রাধাকৃষ্ণ কিশোর জানান, কেন্দ্র যদি ১২% ও ২৮% জিএসটি স্ল্যাব তুলে দিয়ে শুধুমাত্র ৫% ও ১৮% স্ল্যাব চালু করে, তবে তাঁর রাজ্যের অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে। তিনি বলেন, “কেন্দ্র যদি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়, তবে আমরা আপত্তি করব না। কিন্তু রাজস্ব ক্ষতির দায় রাজ্য একা নিতে পারে না। ফেডারেল কাঠামোয় কেন্দ্রের দায়িত্ব রাজ্যগুলিকে সুরক্ষা দেওয়া।”
রাজ্যগুলির মূল যুক্তি, উচ্চ হারে কর আরোপ না হলে তাত্ক্ষণিকভাবে রাজস্বের ঘাটতি তৈরি হবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের দাবি, কম কর হার গ্রাহকের জন্য স্বস্তি আনবে, ফলে ভোগব্যয় বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যাবে।
৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি বড় সংস্কার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যমান চার-স্তরের জিএসটি কাঠামো (৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%) বদলে কেবল দুটি স্তরে নামানো হবে— ৫% ও ১৮%। একই সঙ্গে একটি বিশেষ ৪০% হারের স্ল্যাব রাখা হবে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের জন্য।
সাধারণ ব্যবহার্য পণ্য GST Council meeting compensation
প্রস্তাবিত পরিবর্তনে অনেক সাধারণ ব্যবহার্য পণ্য যেমন ঘি, বাদাম, ২০ লিটারের পানীয় জল, নোনতা খাবার, কিছু জুতো ও পোশাক, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামকে ১২% থেকে কমিয়ে ৫% স্ল্যাবে আনার কথা ভাবা হয়েছে। একইভাবে সাইকেল, পেনসিল, ছাতা, হেয়ারপিনের মতো পণ্যও ৫% স্ল্যাবে চলে আসতে পারে।
অন্যদিকে, বর্তমানে ২৮% হারে করযোগ্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী— যেমন নির্দিষ্ট আকারের টিভি, ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন— কমিয়ে ১৮% স্ল্যাবে আনার প্রস্তাব রয়েছে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য দাম কিছুটা কমতে পারে।
অটোমোবাইল ক্ষেত্রে আলাদা হার প্রয়োগের পরিকল্পনা হয়েছে। ছোট গাড়ি বা এন্ট্রি-লেভেল কারে ১৮% জিএসটি ধার্য হতে পারে, যেখানে বিলাসবহুল গাড়ি ও এসইউভি পড়বে ৪০% স্ল্যাবে। একইভাবে তামাকজাত দ্রব্য, পান মসলা ও সিগারেটের উপরও ৪০% কর আরোপের প্রস্তাব রয়েছে, তার উপর আবার অতিরিক্ত করের কথাও ভাবা হচ্ছে।
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালুর সময় কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে প্রথম পাঁচ বছর রাজ্যগুলির সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই উদ্দেশ্যে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের উপর ক্ষতিপূরণ সেস ধার্য করা হয়েছিল, যার হার ১% থেকে ২৯০% পর্যন্ত।
এই ক্ষতিপূরণ সেসের সময়সীমা প্রথমে জুন ২০২২ পর্যন্ত ছিল। পরে কোভিড মহামারীর সময় রাজ্যগুলির ক্ষতি পূরণ করতে কেন্দ্র ঋণ নেয় এবং সেই ঋণ শোধ করতে সেস আরোপের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত করা হয়। সূত্র জানাচ্ছে, এই ঋণের পরিশোধ অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর ক্ষতিপূরণ সেস পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে।
বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের কর কাঠামো
এমন অবস্থায়, প্রশ্ন উঠছে- বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যের কর কাঠামো কীভাবে অপরিবর্তিত রাখা হবে? ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিলের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে এই নতুন কাঠামো নির্ধারণ।
পশ্চিমবঙ্গ সহ কয়েকটি রাজ্য দাবি করেছে, ৪০% হারের উপর অতিরিক্ত যে কর ধার্য করা হবে, তার সম্পূর্ণ অংশ রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হবে, যাতে রাজস্ব ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হয়।
কেরালার প্রতিনিধি জানান, “আমরা কর কাঠামো সরলীকরণের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু রাজ্যের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যদি হঠাৎ স্ল্যাব কমানো হয়, তবে আমরা বড় সমস্যায় পড়ব।”
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্পমেয়াদে এই সংস্কারে রাজস্ব ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভোগ বাড়তে পারে। দাম কমলে বাজারে ক্রেতার চাহিদা বাড়বে, যার ফলে রাজস্ব কিছুটা ফিরে আসতে পারে। তবে রাজ্যগুলির ভরসা পাচ্ছে না কেন্দ্রের এই যুক্তিতে।
বিরোধী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা একবাক্যে জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা না পেলে তারা প্রস্তাব মেনে নেবেন না। এখন দেখার বিষয়, দুই দিনের জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে কেন্দ্র ও রাজ্যের এই টানাপোড়েনের কী সমাধান বের হয়।
Business: Ahead of the 56th GST Council meeting, eight opposition-ruled states demanded full compensation from the Centre for any revenue loss resulting from the proposed GST rate rationalization. They argue that simplifying tax slabs to 5% and 18% could create a significant fiscal deficit for states.