ভারত সরকার নতুন প্রতিষ্ঠিত গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনাল (GSTAT) এর জন্য একটি বিস্তৃত পদ্ধতিগত কাঠামো প্রবর্তন করে জিএসটি আপিল ট্রাইব্যুনাল (প্রসিডিউর) রুলস, ২০২৫ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই নিয়মগুলো ই-ফাইলিং বাধ্যতামূলক করেছে এবং হাইব্রিড মোডে শুনানির সুবিধা প্রদান করছে, যার লক্ষ্য বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় অ্যাক্সেসযোগ্যতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এই নিয়মগুলো ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা GST বিরোধ নিষ্পত্তিকে আরও স্বচ্ছ, ডিজিটাল এবং সময়োপযোগী করে তুলবে।
GSTAT প্রসিডিউর রুলসের প্রধান বৈশিষ্ট্য:
নতুন নিয়ম অনুসারে, জরুরি মামলাগুলোর জন্য দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুর ১২টার আগে দাখিল করা সম্পূর্ণ আবেদনগুলো পরবর্তী কর্মদিবসে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হবে। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে দাখিল করা মামলাগুলো প্রেসিডেন্টের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তী দিন তালিকাভুক্ত হতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চগুলো সকাল ১০:৩০ থেকে দুপুর ১:৩০ এবং বিকেল ২:৩০ থেকে ৪:৩০ পর্যন্ত অধিবেশন পরিচালনা করবে, তবে প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এই সময় পরিবর্তন হতে পারে। জিএসটিএটি-র প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো প্রতি কর্মদিবসে সকাল ৯:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এই নিয়মগুলো ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে আবেদন দাখিলের প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। গ্রাহকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে পারবেন, এবং হাইব্রিড মোডে শুনানি (অনলাইন ও অফলাইন) বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে আরও নমনীয় করবে। এই ডিজিটাল পদক্ষেপ গ্রাহকদের সময় এবং খরচ বাঁচাতে সহায়ক হবে।
জিএসটিএটি: গঠন ও ভূমিকা:
জিএসটিএটি সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স আইন, ২০১৭-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি সিজিএসটি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য জিএসটি আইনের অধীনে প্রথম আপিল কর্তৃপক্ষের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য দ্বিতীয় আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে।
২০২৪ সালের মে মাসে, সরকার ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) সঞ্জয় কুমার মিশ্রকে জিএসটিএটি-র প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করে। তাঁর নিয়োগ ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত একটি সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।
জিএসটিএটি-র প্রধান বেঞ্চ নয়াদিল্লিতে অবস্থিত হবে এবং জিএসটি কাউন্সিলের অনুমোদন অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে ৩১টি রাজ্য বেঞ্চ গঠন করা হবে। এই বেঞ্চগুলোতে বিচারিক এবং প্রযুক্তিগত সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া বর্তমানে চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিশেষজ্ঞরা জিএসটিএটি-র প্রতিষ্ঠানকে ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করছেন। এএমআরজি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিনিয়র পার্টনার রজত মোহন বলেন, “১১টি অধ্যায়, ৭০টি নিয়ম এবং ৪টি স্ট্যাটুটরি ফর্ম সহ এই আইনি কাঠামো জিএসটিএটি আপিলের সম্পূর্ণ পদ্ধতিগত এবং প্রশাসনিক জীবনচক্র কভার করে। চারটি প্রমিত ফর্ম—ফর্ম জিএসটিএটি-০১ (আপিল), ফর্ম জিএসটিএটি-০২ (অর্ডার শিট), এবং সিডিআর-০১ ও সিডিআর-০২—কোর্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য কাঠামোগত স্পষ্টতা প্রদান করে।”
ইওয়াই-এর ট্যাক্স পার্টনার সৌরভ আগরওয়াল বলেন, “সুস্পষ্ট সময়সীমা এবং ডিজিটাইজেশন প্রচেষ্টা বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে সুগম করবে এবং পদ্ধতিগত বিলম্ব কমাবে। এটি করদাতাদের আস্থা বাড়ানো এবং ভারতের পরোক্ষ কর মামলার কাঠামোকে আধুনিকীকরণের একটি বড় পদক্ষেপ।”
একেএম গ্লোবালের পার্টনার-ট্যাক্স সন্দীপ সেহগাল বলেন, “এই নিয়মগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ার উপর স্পষ্টতা প্রদান করে। আবিষ্কার, পরিদর্শন এবং নথি উৎপাদনের পদ্ধতিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, নিয়মগুলো আপিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, কর্তব্য এবং কার্যাবলীও কোডিফাই করেছে।”
জিএসটিএটি-র গুরুত্ব:
জিএসটিএটি-র কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে জিএসটি বিরোধ নিষ্পত্তিতে ধারাবাহিকতা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি উচ্চ আদালতগুলোর উপর চাপ কমাবে এবং একটি স্বচ্ছ, অভিন্ন এবং সময়োপযোগী বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। বর্তমানে, জিএসটি-সংক্রান্ত বিরোধগুলো প্রায়ই উচ্চ আদালতে যায়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। জিএসটিএটি এই বিরোধগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করবে, যা করদাতাদের জন্য সুবিধাজনক।
জিএসটিএটি-র প্রধান বেঞ্চ এবং ৩১টি রাজ্য বেঞ্চ সারা দেশে করদাতাদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্যতা বাড়াবে। ই-ফাইলিং এবং হাইব্রিড শুনানির সুবিধা গ্রাহকদের জন্য প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করবে। এছাড়া, জিএসটিএটি-র সিদ্ধান্তগুলো জিএসটি আইনের ব্যাখ্যায় ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে, যা ব্যবসায়ী এবং করদাতাদের জন্য নিশ্চিতি প্রদান করবে।
অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব:
জিএসটিএটি-র কার্যক্রম ভারতের জিএসটি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য কর সম্মতি সহজ করবে এবং কর বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটিএটি-র ডিজিটাল পদ্ধতি এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও গ্রাহকবান্ধব করে তুলবে। এটি বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক, যারা প্রায়ই দীর্ঘ মামলার কারণে আর্থিক চাপের মুখে পড়ে।
গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ:
করদাতাদের উচিত জিএসটিএটি-র নতুন নিয়ম এবং ই-ফাইলিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। জিএসটি বিরোধ থাকলে, সম্পূর্ণ নথি সহ সময়মতো আবেদন দাখিল করা গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদন জমা দেওয়া এবং হাইব্রিড শুনানির সুবিধা গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া, জিএসটি বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে।
জিএসটি আপিল ট্রাইব্যুনাল (প্রসিডিউর) রুলস, ২০২৫ ভারতের জিএসটি ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ই-ফাইলিং, হাইব্রিড শুনানি এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মাধ্যমে জিএসটিএটি বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে দ্রুত, স্বচ্ছ এবং গ্রাহকবান্ধব করে তুলবে। নয়াদিল্লির প্রধান বেঞ্চ এবং ৩১টি রাজ্য বেঞ্চ সারা দেশে করদাতাদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংস্কার ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা, স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা নিয়ে আসবে। জিএসটিএটি-র কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে করদাতাদের আস্থা বাড়বে এবং ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই নতুন কাঠামোর মাধ্যমে ভারত তার জিএসটি ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।