রিয়েল এস্টেটে বড় পরিবর্তনের আভাস, কার্যকর হচ্ছে GST 2.0

ভারতের কর কাঠামোয় এক যুগান্তকারী সংস্কারের পথে হাঁটছে কেন্দ্র সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন “GST 2.0”, যেখানে করহারকে সরল করে মাত্র দুইটি…

GST 2 0 To Help Real Estate Sector With Easier Compliance Costs

ভারতের কর কাঠামোয় এক যুগান্তকারী সংস্কারের পথে হাঁটছে কেন্দ্র সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন “GST 2.0”, যেখানে করহারকে সরল করে মাত্র দুইটি স্ল্যাবে নামিয়ে আনা হবে — ৫% ও ১৮%। বিশ্লেষক ও শিল্পমহলের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু কর জটিলতা কমাবে না, বরং রিয়েল এস্টেট খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।

বর্তমানে জিএসটি চারটি প্রধান স্ল্যাবে বিভক্ত — ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%। এর মধ্যে নির্মাণশিল্প বরাবরই উচ্চ করের চাপে ছিল। যেমন, সিমেন্টে করহার ২৮%, অন্যদিকে স্টিল, পেইন্টস, ইলেকট্রিক ফিটিংসের মতো অপরিহার্য সামগ্রী ১২% ও ১৮% হারে ট্যাক্সের আওতায় পড়ত।
নতুন জিএসটি ২.০ কাঠামোয় ধারণা করা হচ্ছে ১২% স্ল্যাবের প্রায় সমস্ত পণ্যকে ৫%-এ নামিয়ে আনা হবে। একইভাবে ২৮% স্ল্যাবের অধিকাংশ পণ্য নেমে আসবে ১৮%-এ। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

   

এতে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের জন্য খরচ কমবে এবং সেই সুবিধা তারা ক্রেতাদের কাছেও পৌঁছে দিতে পারবেন। এর ফলে মধ্যবিত্ত থেকে বিলাসবহুল আবাসন—সব ধরনের বাড়ি আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে।

এখনকার নিয়ম অনুযায়ী সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্পে ১% হারে জিএসটি ধার্য হয় (ইনপুট ক্রেডিট ছাড়া)। আর মাঝারি ও বিলাসবহুল আবাসনের ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন বাড়ির উপর ৫% হারে জিএসটি প্রযোজ্য। কিন্তু এখানে কাঁচামালের উপর অতিরিক্ত করের চাপ থাকার কারণে নির্মাণ ব্যয় বাড়ত।

নতুন কাঠামোয় যেহেতু কাঁচামালের খরচ কমে আসবে, সাশ্রয়ী আবাসন হবে আরও কার্যকরী। একইসঙ্গে মাঝারি ও বিলাসবহুল সেগমেন্টেও প্রকৃত খরচ কিছুটা কমতে পারে, যদি নির্মাতারা এই সাশ্রয় সরাসরি ক্রেতাদের দেন।

রয়্যাল গ্রিন রিয়েলটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইয়াশাঙ্ক ওয়াসন বলেছেন, “দুই স্ল্যাবের জিএসটি সত্যিই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এতে জটিলতা কমবে, প্রকল্প খরচ কমবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য আবাসন আরও সহজলভ্য হবে। ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে এবং চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।”

শিল্প সংস্থা ক্রেডাই (CREDAI) মনে করছে, এই সংস্কার রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বড় পরিবর্তন আনবে। ব্যয় কমার ফলে বহু স্থগিত প্রকল্প নতুন করে শুরু হতে পারে এবং নতুন প্রকল্প ঘোষণার সম্ভাবনা বাড়বে। বিশেষত টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরে, যেখানে ক্রেতারা দামের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল, সেখানেই এই পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে।

বিপিটিপি-র সিইও মানিক মালিক বলেছেন, “এটি বহুল প্রত্যাশিত সংস্কার। এতে স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আসবে। যদিও নির্মাতাদের কনট্রাক্ট সার্ভিসে এখনও ১৮% জিএসটি বহন করতে হবে, তবুও সার্বিকভাবে তরলতা বাড়বে, জটিলতা কমবে এবং ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।”

Advertisements

অন্যদিকে, শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৮% হারে কিছু কাঁচামাল ও পরিষেবা রাখা হলে প্রকল্পের গুণমান বা গতি কোনোভাবেই ব্যাহত হবে না। বরং দ্বি-স্ল্যাব ব্যবস্থা নির্মাণশিল্পে নীতি স্থিরতার বার্তা দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক।

ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বড় লাভ হবে স্বচ্ছতা ও সাশ্রয়। এখন পর্যন্ত জিএসটির জটিল কাঠামো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করত। নতুন ব্যবস্থায় হিসাব হবে সহজ, আর্থিক পরিকল্পনাও হবে স্পষ্ট।

প্রথমবারের বাড়ি ক্রেতারা—বিশেষ করে সাশ্রয়ী আবাসনের গ্রাহকরা—সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। সরকারের “হাউজিং ফর অল” মিশনের সঙ্গেও এই সিদ্ধান্ত সঙ্গতিপূর্ণ।

রুটস ডেভেলপার্স-এর সিওও সুমিত রঞ্জন বলেছেন, “সরল জিএসটি খরচ ও কমপ্লায়েন্স দুই-ই কমায়। এতে ক্রেতাদের ক্ষমতা বাড়বে, ডেভেলপাররা দ্রুত স্টক বিক্রি করতে পারবেন এবং বাজারে গতিশীলতা ফিরবে।”

একই সুরে কথা বলেছেন প্রাইম ডেভেলপমেন্টস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রাকেশ মালহোত্রা। তিনি বলেছেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি গেম-চেঞ্জার সিদ্ধান্ত। কম ট্যাক্স খরচে ক্রেতাদের বোঝা হালকা হবে, দ্রুত ইনভেন্টরি ক্লিয়ার হবে এবং নতুন বিনিয়োগ আসবে। এটি প্রবৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী আবাসনের যুগপৎ সাফল্য নিশ্চিত করবে।”

মোটকথা, জিএসটি ২.০ শুধু একটি কর সংস্কার নয়, বরং ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। সরল করহার নির্মাতাদের খরচ কমাবে, ক্রেতাদের জন্য বাড়ি কেনাকে সহজ করবে এবং সামগ্রিকভাবে আবাসন শিল্পকে আরও গতিশীল করবে।

যদি এই পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে আগামী বছরগুলিতে ভারতের আবাসন খাত এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি—দুটোই উল্লেখযোগ্য উত্থান প্রত্যক্ষ করতে পারে।