GST 2.0 Stock Market Impact
কলকাতা: বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজার দিন শুরু করেছিল একেবারে দারুণভাবে। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠকের পর জিএসটি কাউন্সিল যে ‘জিএসটি ২.০’ সংস্কার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার প্রভাব পড়েছিল বৃহস্পতিবার সকালেই। বাজার খোলার ঘণ্টা বাজার সঙ্গেই সেনসেক্স ও নিফটি তীব্র উত্থানে যায়। তবে দিনের শেষে সেই উত্থান ধরে রাখা যায়নি। মুনাফা-তোলা, নির্দিষ্ট কিছু খাতে দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক বাজারের চাপ মিলিয়ে শেষপর্যন্ত সূচকগুলি সামান্য লাভ নিয়ে দিন শেষ করে।
সেনসেক্স ও নিফটি উভয়ই উচ্চতর স্তরে বন্ধ
দিন শেষে সেনসেক্স ও নিফটি উভয়ই ০.১ থেকে ০.২ শতাংশ উচ্চতর স্তরে বন্ধ হয়েছে। অর্থাৎ বাজারে ইতিবাচকতার ইঙ্গিত থাকলেও স্থায়ী গতি পাওয়া যায়নি। প্রথমদিকে যে শক্তিশালী র্যালির আশা তৈরি হয়েছিল, সেটি দিনের দ্বিতীয়ার্ধে চাপের মুখে পড়তে শুরু করে।
অজিত মিশ্র, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা), রিলিগেয়ার ব্রোকিং লিমিটেড, বলেন, “বাজার বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড ওঠানামার মধ্যে দিয়ে গেছে। জিএসটি সংস্কারের ইতিবাচক প্রভাবে সূচক শুরুতেই শক্তিশালী অবস্থান নেয়। অটো এবং কনজিউমার স্ট্যাপলস শেয়ারগুলির দ্রুত উত্থান বাজারকে টেনে তোলে। কিন্তু কিছু হেভিওয়েট শেয়ারে দুর্বলতা এবং মুনাফা তুলে নেওয়ার চাপে ধীরে ধীরে বাজার নিচের দিকে নামতে থাকে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “জিএসটি ২.০ সংস্কার ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। বিশেষত অটোমোবাইল ও কনজিউমার স্ট্যাপলস সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে। পাশাপাশি গ্রামীণ প্রণোদনা যুক্ত ধাতু ও অবকাঠামো সংস্থাগুলিও নজরে থাকবে।”
শক্তিশালী শরু হলেও ছন্দপতন GST 2.0 Stock Market Impact
অন্যদিকে, সুদীপ শাহ, প্রধান (টেকনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেরিভেটিভস), এসবিআই সিকিউরিটিজ, মন্তব্য করেন, “যদিও বাজার একেবারে শক্তিশালীভাবে শুরু করেছিল, দিনের শেষে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়নি। সেশন যত গড়িয়েছে, মুনাফা তোলার চাপ বাড়তে থাকে। এতে বাজারের প্রাথমিক বেশিরভাগ লাভ কার্যত মুছে যায়।
বৃহস্পতিবার অটোমোবাইল, ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ও এফএমসিজি খাত বাজারের প্রধান চালক হিসেবে উঠে আসে। এই সেক্টরগুলিতে বিনিয়োগকারীরা স্পষ্ট আস্থা দেখান। অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), এনার্জি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জিএসটি সংস্কারের ফলে বিশেষত অটো খাতের গাড়ির দাম কমতে পারে। একইভাবে ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস বা দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর দাম কমলে গ্রাহকের পকেটে চাপ কমবে। এর ফলে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং বাজারে চাহিদা আরও বাড়তে পারে।
বুধবার ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর জিএসটি কাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জিএসটি এখন থেকে মূলত দুইটি স্ল্যাবে সীমাবদ্ধ থাকবে — ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ।
১২ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ হার বাতিল করা হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্যের দাম এই সংস্কারের ফলে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকার একে দেশের মানুষের জন্য ‘দীপাবলি উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের বহু প্রয়োজনীয় সামগ্রী এখন সস্তা হবে।
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইতিবাচক সংস্কারের পরও বাজার এখনও কিছু বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (FII) ক্রমাগত মূলধন প্রত্যাহার।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কনীতির চাপ।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথতা।
এসবই বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা-দেখো অবস্থায় রয়েছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদিও জিএসটি সংস্কার স্বল্পমেয়াদে ভোগ্যপণ্যের শেয়ারে জোয়ার আনতে পারে, তবে বৈশ্বিক ঝুঁকি মাথায় রেখে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বিশেষ করে টেকনিক্যাল স্তরে নিফটি এবং সেনসেক্স এখনও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বাজার কার্যত এক মিশ্র দিনের প্রতিফলন। একদিকে, জিএসটি ২.০ সংস্কার বাজারে আশা ও আশাবাদ এনেছে। অন্যদিকে, মুনাফা তোলা ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাপ বাজারের গতি রোধ করেছে। দিনশেষে যদিও সূচক সামান্য লাভ নিয়ে বন্ধ হয়েছে, তবে আগামি দিনে স্থায়ী র্যালির জন্য বিনিয়োগকারীরা সরকারের সংস্কার প্রয়াসের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিবেশের উন্নতির দিকেও তাকিয়ে রয়েছেন।