জিএসটি ২.০ আসছে? কর কাঠামো সহজ করতে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী

ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST ) কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কারের পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে কেন্দ্র সরকার। এই প্রস্তাবিত ‘জিএসটি ২.০’ (GST 2.0 ) সংস্কারের অংশ…

GST 2.0 Reform on the Horizon: FM Nirmala Sitharaman Meets Industry Leaders for Tax Simplification

ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (GST ) কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কারের পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে কেন্দ্র সরকার। এই প্রস্তাবিত ‘জিএসটি ২.০’ (GST 2.0 ) সংস্কারের অংশ হিসেবে আজ, অর্থাৎ ২৭ মে, দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক ও মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ।

সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মানিকন্ট্রোল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া ইনক’-এর (India Inc) প্রতিনিধিরা একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা (presentation) দেবেন, যেখানে জিএসটি সংস্কার সংক্রান্ত তাঁদের প্রত্যাশা ও সুপারিশ তুলে ধরা হবে।

   

শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য
প্রস্তাবিত এই সংস্কার কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো জিএসটি কাঠামোকে আরও সরল, যুক্তিসঙ্গত এবং ব্যবসাবান্ধব করে তোলা। আলোচনার মাধ্যমে সরকারের অভিপ্রায় হলো রাজ্যগুলির সঙ্গে একযোগে এক নতুন, কার্যকর ও যুক্তিসঙ্গত কর কাঠামো গঠনের দিকে এগোনো।

একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই বৈঠকে নির্মলা সীতারামন ভারতের শিল্প মহলের সঙ্গে জিএসটি ২.০ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবেন। শিল্প মহলের পক্ষ থেকে তাদের সুপারিশ ও সমস্যাগুলি একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে।”

কর হার যুক্তিকরণে জোর
জিএসটি কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো এর বর্তমান চার-স্তরবিশিষ্ট কর হার: ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%। শিল্প মহলের দীর্ঘদিনের দাবি, এই হারগুলিকে সরলীকরণ করে একটি তিন-স্তরবিশিষ্ট কাঠামো গড়ে তোলা হোক। এই দাবি মেনে নেওয়ার দিকেই এগোচ্ছে সরকার।

একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “১২ শতাংশ হারটি বাতিল করে তিনটি স্তরে কর হার নির্ধারণের ভাবনা আছে—৫%, ১৮% এবং ২৮%। এতে করসংক্রান্ত বিরোধ কমবে, রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে এবং ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।” এই হারের সরলীকরণে শুধু করদাতার সুবিধাই হবে না, বরং রাজস্ব বিভাগের কাজও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা
অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ করের প্রভাব ভোক্তাদের উপর বেশি পড়ে। ফলে, জিএসটি কাঠামো সরল হলে পণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে, যা সরাসরি ভোক্তা ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে এবং অর্থনীতিতে গতি আসবে।

Advertisements

খাদ্যপণ্যের শ্রেণিবিন্যাসে নজর
জিএসটি কাঠামোতে খাদ্যপণ্যের শ্রেণিবিন্যাস একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়। অনেক সময় এক ধরনের খাদ্যপণ্য বিভিন্ন হারে করের আওতায় পড়ে, যার ফলে বিতর্ক ও মামলা-মোকদ্দমা বাড়ে এবং রাজস্ব আদায়ে সমস্যা হয়।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, “খাদ্যপণ্যের শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিভ্রান্তি রয়েছে। বারবার বিরোধ ও মামলার ফলে রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। এই কারণে এই শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হচ্ছে।”

জিএসটি ২.০: এক নতুন দিগন্ত
২০১৭ সালের জুলাই মাসে জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে এটি ভারতের কর ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যাও সামনে এসেছে—কর হার নিয়ে অস্পষ্টতা, শ্রেণিবিন্যাসে বিভ্রান্তি, উচ্চতর প্রশাসনিক জটিলতা এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য উচ্চ মানের জটিলতা।

এখন পর্যন্ত রাজস্ব সচিবদের নেতৃত্বে গঠিত গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স (GoM) ধাপে ধাপে সংস্কার আনার চেষ্টা করেছে। তবে ‘জিএসটি ২.০’ সংস্কার এক বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শিল্প মহল।

এই বৈঠক শুধুই একটি আলোচনামূলক পর্ব নয়, বরং এটি হতে চলেছে ভবিষ্যতের জিএসটি কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর। শিল্প মহলের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সরকারের খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি মিলেই তৈরি করতে পারে এমন একটি কর ব্যবস্থার রূপরেখা, যা ব্যবসাবান্ধব, সহজবোধ্য এবং আর্থিকভাবে টেকসই। ‘এক দেশ, এক কর’ স্লোগানের প্রকৃত বাস্তবায়নও সম্ভব হতে পারে এই সংস্কারের মাধ্যমে।

আগামী মাসগুলিতে এই আলোচনা ও প্রস্তাবগুলির ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত রূপরেখা প্রকাশ করতে পারে কেন্দ্র সরকার। সবমিলিয়ে, ভারতীয় কর ব্যবস্থার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত—জিএসটি ২.০।