ভারত সরকারের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইথানল (Ethanol) ব্লেন্ডিংয়ের ব্যবহার দেশজুড়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত পেট্রোলে ইথানলের গড় মিশ্রণের হার পৌঁছেছে ১৮.৯৩ শতাংশ, যা সরকারের ২০৩০ সালের ২০ শতাংশ টার্গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য সূচক। ইন্ডিয়ান টেক অ্যান্ড ইনফ্রা (@IndianTechGuide) এর সর্বশেষ পোস্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যভিত্তিক ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের হারে বৈচিত্র্য দেখা গেছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গে ১৯.২৮ শতাংশের মতো উচ্চ হার রেকর্ড করা হয়েছে, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও জ্বালানি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিবেশে ইথানলের ভূমিকা
ইথানল, যা প্রধানত গুড় বা শস্য থেকে উৎপাদন করা হয়, একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি যা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে জুন ২০২৫ পর্যন্ত প্রায় ৬৯৮ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পেয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় ভারতের অবদানকে আরও শক্তিশালী করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি ২০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের লক্ষ্য অর্জন করা যায়, তবে ভবিষ্যতে পেট্রোলের আমদানি কমে গিয়ে দেশের জ্বালানি বিলে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হবে।
পশ্চিমবঙ্গে ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের হার ১৯.২৮ শতাংশ হলেও, রাজ্যের কৃষকরা এর সুবিধা উপভোগ করছেন। ইথানল উৎপাদনের জন্য গুড় ও শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। ইন্ডিয়া স্ট্যাটিসটিক্স (@indi_statistics) এর তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা ইথানল-সম্পর্কিত ফসল থেকে প্রতি বছর প্রায় ১.১৮ লক্ষ টাকা আয় করছেন, যা রাজ্যের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে এই উদ্যোগটির সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনাও যুক্ত রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন যে, ইথানল মিশ্রিত পেট্রোলের কারণে গাড়ির মাইলেজ কমে যাচ্ছে এবং ইঞ্জিনের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। @SouthAsia_Observer এর পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ করে BS4 ইঞ্জিনের গাড়িগুলোতে ইথানলের ব্যবহার মাইলেজ ও শক্তি হ্রাস করছে, যা গাড়ির ব্যবহারকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। @RelatableAFzone এর মতে, ইথানল ব্লেন্ডিং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে, কারণ পেট্রোলের দাম কমলেও ভাটা বা ট্যাক্স একই রয়ে গেছে, যা গ্রাহকদের কাছে সুবিধা দেয়নি।
একইভাবে, @TheDataHubX এর তথ্য অনুযায়ী, ২৬ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ১০৬.২ টাকা, যা দেশের অনেক রাজ্যের তুলনায় উচ্চ। এই উচ্চ মূল্যের মধ্যে ইথানলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও গ্রাহকদের জন্য দাম কমানোর কোনো সুবিধা প্রদান করা হয়নি, যা সমালোচনার কারণ হয়ে উঠেছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সরকার এখন পরিকল্পনা করছে ইথানল উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য। ৩০ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশের ইথানল উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৩৮০ কোটি লিটার ছিল, যার মধ্যে ৮৭৫ কোটি লিটার গুড় ভিত্তিক এবং ৫০৫ কোটি লিটার শস্য ভিত্তিক। ভবিষ্যতে এই ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলে রাজ্যগুলোতে ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের হার সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
ইথানল ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে ভারত পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের দিকে এগোচ্ছে, তবে গ্রাহকদের চাহিদা ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোতে এই উদ্যোগের সফলতা কৃষকদের জন্য আশার আলো দেখিয়েছে, কিন্তু গাড়ির ব্যবহারকারীদের জন্য মাইলেজ ও খরচের বিষয়ে সরকারকে আরও সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যতে এই ব্যালেন্স সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারলে ইথানল ব্লেন্ডিং সত্যিই একটি সবুজ বিপ্লব হয়ে উঠতে পারে।