মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সবুজ-ইস্পাত বিপ্লব শুরু মহারাষ্ট্রে

মুম্বই, ২১ সেপ্টেম্বর : মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ঘোষণা করেছেন যে, মহারাষ্ট্র ভারতের সবুজ ইস্পাত বিপ্লবের পথপ্রদর্শক হতে প্রস্তুত। শনিবার মুম্বইয়ে একটি শিল্প সম্মেলনে…

Maharashtra CM new initiative

মুম্বই, ২১ সেপ্টেম্বর : মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ঘোষণা করেছেন যে, মহারাষ্ট্র ভারতের সবুজ ইস্পাত বিপ্লবের পথপ্রদর্শক হতে প্রস্তুত। শনিবার মুম্বইয়ে একটি শিল্প সম্মেলনে তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্র শুধু ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী নয়, এটি এখন টেকসই উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবে। আমরা সবুজ ইস্পাত উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে।”

Advertisements

এই ঘোষণা ভারতের নেট-জিরো লক্ষ্য এবং ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।সবুজ ইস্পাত বলতে এমন ইস্পাত উৎপাদন বোঝায় যা কার্বন নির্গমন কমিয়ে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মহারাষ্ট্র সরকার এই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। ফড়নবিশ জানিয়েছেন, রায়গড় এবং চন্দ্রপুরে দুটি সবুজ ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।

Advertisements

এই প্রকল্পগুলো হাইড্রোজেন-ভিত্তিক ইস্পাত উৎপাদন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে জেএসডব্লিউ স্টিল এবং টাটা স্টিলের মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। তারা মহারাষ্ট্রে বিনিয়োগে আগ্রহী।” এই প্রকল্পগুলো ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মহারাষ্ট্রের ইস্পাত শিল্প ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় ২০% অবদান রাখে। তবে, ঐতিহ্যগত ইস্পাত উৎপাদন কয়লা-নির্ভর এবং উচ্চ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। সবুজ ইস্পাতের দিকে অগ্রসর হওয়া পরিবেশের জন্য উপকারী এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। ফড়নবিশ বলেন, “এই উদ্যোগ ৫০,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।”

তিনি আরও জানান, সরকার হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র এবং সৌরশক্তি-ভিত্তিক প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জমি এবং ট্যাক্স ছাড় দেবে।কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী এইচ. ডি. কুমারস্বামী এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, “মহারাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতের সবুজ ইস্পাত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ইস্পাত উৎপাদনের ২৫% সবুজ প্রযুক্তিতে নিয়ে যেতে চাই।”

তিনি জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের প্রকল্পগুলো জাতীয় সবুজ হাইড্রোজেন মিশনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই মিশনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন।মহারাষ্ট্রের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। পরিবেশকর্মী সুজিত পাটোয়ার্ডান বলেন, “ইস্পাত শিল্পের কার্বন পদচিহ্ন কমানো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মহারাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ অন্য রাজ্যের জন্য উদাহরণ হবে।” তবে, কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন যে, সবুজ ইস্পাত উৎপাদনের প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি এবং এটি ইস্পাতের দাম বাড়াতে পারে।সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘোষণা নিয়ে উৎসাহ দেখা গেছে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মহারাষ্ট্র দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। এটি ভারতের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ।”

তবে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “এই প্রকল্প কি সময়মতো শেষ হবে, নাকি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হয়ে থাকবে?” ফড়নবিশ এই উদ্বেগের জবাবে বলেছেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং পূরণ করব। মহারাষ্ট্র সবুজ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবে।”এই উদ্যোগ মহারাষ্ট্রকে ভারতের শিল্প মানচিত্রে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করবে।

কালীগঞ্জে ফের উত্তেজনা! তামান্না খুন মামলার রেশে CPIM-এর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ

টাটা স্টিলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এটি ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ।” রাজ্যের এই পদক্ষেপ শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই নয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলবে। মহারাষ্ট্রের এই সবুজ বিপ্লব কি ভারতকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে, তা সময়ই বলে দেবে।