পেনশন খাত সংস্কারে উচ্চস্তরের ফোরাম গঠন করল কেন্দ্র

ভারতের পেনশন ব্যবস্থাকে (Pension Reform) আরও শক্তিশালী ও সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার একটি উচ্চস্তরের কমিটি গঠন করেছে। এর নাম ফোরাম ফর…

8th Pay Commission Senior Citizens and Family Pensioners Demand Major Pension Hike

ভারতের পেনশন ব্যবস্থাকে (Pension Reform) আরও শক্তিশালী ও সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার একটি উচ্চস্তরের কমিটি গঠন করেছে। এর নাম ফোরাম ফর রেগুলেটরি কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফ পেনশন প্রোডাক্টস। দেশের পেনশন খাতকে ভ fragmented অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্যই এই উদ্যোগ।

বর্তমানে দেশের কর্মজীবী মানুষের মধ্যে মাত্র প্রায় ১২ শতাংশ আনুষ্ঠানিক পেনশন সুবিধার আওতায় আছেন। অর্থাৎ বিশাল অংশের শ্রমজীবী ও স্বনিযুক্ত মানুষ এখনো সামাজিক নিরাপত্তা বঞ্চিত। অথচ ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি পাঁচ জন ভারতীয়র একজন হবেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী। অর্থ মন্ত্রকের অনুমান অনুযায়ী ২০৪৭ সালের মধ্যেই দেশের প্রবীণ নাগরিক সংখ্যা শিশুদের ছাড়িয়ে যাবে। ফলে বার্ধক্যে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পেনশন ব্যবস্থা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

   

অর্থ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই ফোরামের সভাপতি হবেন ডিপার্টমেন্ট অফ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (DFS)-এর সচিব। সদস্য হিসেবে থাকবেন কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, শ্রম মন্ত্রক, রাজস্ব মন্ত্রক ও কয়লা মন্ত্রকের সচিবরা। সঙ্গে থাকবেন সেবি (Sebi), বিমা নিয়ন্ত্রক IRDAI, আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (IFSCA), রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) ডেপুটি গভর্নর, এবং ইপিএফও (EPFO)-এর সেন্ট্রাল প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার। অর্থাৎ দেশের প্রধান আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক একত্রে এই ফোরামে যুক্ত থাকছে।

এছাড়া অর্থ মন্ত্রকের পেনশন সংস্কার বিভাগের যুগ্মসচিব হবেন ফোরামের কার্যনির্বাহী সচিব। প্রয়োজনে ফোরামের সভায় বাইরের বিশেষজ্ঞ বা ব্যক্তিদেরও ডাকা যেতে পারে।

ফোরামের মূল উদ্দেশ্য হলো—
একীভূত নিয়ন্ত্রক ও তদারকি কাঠামো তৈরি করা।
নতুন পেনশন পণ্য (pension products) চালু করা।
গ্রাহক সুরক্ষা জোরদার করা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির সহজ ব্যবস্থা গড়া।
বিনিয়োগ মানদণ্ড ও নিয়ন্ত্রক কার্যপদ্ধতিতে সামঞ্জস্য আনা।
দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়কে অবকাঠামো খাতে টেনে আনা।
আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলন (best practices) গ্রহণ করা।

ফোরাম নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এই সব বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করবে। তবে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতা একত্র করার বিষয়টি হলে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে।
ভারতের পেনশন সম্পদ বর্তমানে জিডিপির মাত্র ১৭ শতাংশ। অথচ ওইসিডি (OECD) দেশের গড় ৮০ শতাংশেরও বেশি। এই বৈষম্যই দেখাচ্ছে ভারতের অবসরকালীন নিরাপত্তা কতটা পিছিয়ে।

এখন দেশে পেনশন খাত বহু সংস্থা দ্বারা পরিচালিত:
পিএফআরডিএ (PFRDA): জাতীয় পেনশন সিস্টেম (NPS), একীভূত পেনশন স্কিম (UPS), অটল পেনশন যোজনা (APY)।
ইপিএফও (EPFO): শ্রম মন্ত্রকের অধীন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি।
IRDAI: বিমা সংস্থার পেনশন পণ্য।
অর্থ মন্ত্রক: পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF)।
সেবি (Sebi): পেনশন তহবিল যে বাজারে বিনিয়োগ করে, তা নিয়ন্ত্রণ।

Advertisements

ফলে একই খাতে আলাদা আলাদা নিয়মে পরিচালনা চলায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর ফলেই সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণে অনীহা দেখাচ্ছেন।
বর্তমানে NPS-এ যোগদান স্বেচ্ছাধীন এবং ইপিএফও-এর পেনশন স্কিম ₹১৫,০০০ বেতনের উপরে বাধ্যতামূলক নয়। তাই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের জন্য নতুন ধরণের অবসরকালীন পণ্য তৈরি জরুরি। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্বনিযুক্ত ও অনিয়মিত কর্মীদের জন্যও সহজলভ্য স্কিম প্রয়োজন।

সরকার ইতিমধ্যেই চালু করেছে অটল পেনশন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন (PM-SYM), NPS-Traders ইত্যাদি। কিন্তু এগুলির প্রচার ও কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকায় ব্যাপক সাফল্য আসেনি। নতুন ফোরামের কাজ হবে এই ফাঁক পূরণ করা।

গ্র্যান্ট থর্নটন ভারতের পার্টনার বিবেক আয়ার বলেছেন, “যেকোনো দেশের বিকাশ তার সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর উপর নির্ভর করে। পেনশন ও অবসরকালীন সমাধান এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ পেনশন খাতের চাহিদা ও সরবরাহ দুই দিক থেকেই উন্নতি ঘটাবে এবং দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়কে অবকাঠামো বিনিয়োগে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।”

ফোরামের কার্যপরিধি অনুযায়ী—
সব ধরনের পেনশন স্কিমের জন্য একটি একীভূত অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
গ্রাহকের পোর্টেবিলিটি সুবিধা (এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় স্থানান্তর) সহজ করা হবে।
নতুন পেনশন পণ্য তৈরির পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচার বাড়ানো হবে।
ভবিষ্যতে হয়তো সব পেনশন স্কিমকে একক প্রশাসনিক ছাতার নিচে আনার দিকেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ভারত দ্রুত প্রবীণ সমাজের দিকে এগোচ্ছে। একদিকে জনসংখ্যার গড় আয়ু বাড়ছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ও সহজবোধ্য পেনশন ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে প্রবীণ সমাজ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

সেই কারণেই সরকারের এই নতুন ফোরামকে অনেক বিশেষজ্ঞ এক “গেম চেঞ্জার” পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এখন দেখার বিষয়, কীভাবে নীতিগত ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারত তার অবসরকালীন নিরাপত্তাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পারে।