ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার। ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) ব্যবহারে সাধারণ ক্রেতারা শীঘ্রই পেতে পারেন প্রত্যক্ষ মূল্যছাড়। কেন্দ্রীয় ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক এমনই এক প্রস্তাব বিবেচনা করছে, যার ফলে UPI লেনদেনকে আরও লাভজনক করে তোলা হবে।
UPI বনাম ক্রেডিট কার্ড: কোথায় পার্থক্য?
বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করার সময় ২-৩ শতাংশ ‘মার্চেন্ট ডিসকাউন্ট রেট’ (MDR) দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকার কেনাকাটায় বিক্রেতার পকেট থেকে বেরিয়ে যায় ২ থেকে ৩ টাকা। অনেক সময় দোকানদার এই অতিরিক্ত খরচ নিজে বহন করেন, আবার কখনও তা ক্রেতার উপর চাপিয়ে দেন
এর বিপরীতে UPI-র মাধ্যমে লেনদেনে এমন কোনও চার্জ নেই। বিক্রেতারা পুরো ১০০ টাকা নিজেদের রাখতে পারেন। এই খরচের পার্থক্যই এখন সরাসরি গ্রাহকের পকেটে ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। যদি প্রস্তাবটি কার্যকর হয়, তাহলে UPI ব্যবহারকারীরা ১০০ টাকার পণ্যে মাত্র ৯৮ টাকা দিতে পারেন — একই জিনিস ক্রেডিট কার্ডে কিনলে খরচ হবে পুরো ১০০ টাকা।
কীভাবে কাজ করবে এই ছাড়?
‘লাইভমিন্ট’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার UPI ব্যবহারে ছাড় দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া তৈরি করছে, যাতে ইউজাররা রিয়েল-টাইমে পেমেন্টের সময়েই মূল্যছাড় পান। ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI), ই-কমার্স সংস্থা, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার, ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বিভাগ এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। জুন মাসে এই সমস্ত পক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে এই প্রস্তাবের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হতে পারে।
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে UPI-কে আরও জনপ্রিয় করে তোলা এবং গ্রাহকদের ‘নো-ফি’ ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার দিকে উৎসাহিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। এটি বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধাই পাবেন না, অর্থ সাশ্রয়ও করতে পারবেন।
কিছু পক্ষের আপত্তি
তবে এই প্রস্তাবে সকলেই একমত নন। পেমেন্টস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বহুদিন ধরেই UPI ও রূপে ডেবিট কার্ডে MDR চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, ফ্রি ট্রানজ্যাকশন মডেল দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় এবং এতে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। তবে এখনও পর্যন্ত সরকার সেই দাবিকে মান্যতা দেয়নি।
১৬ জুন থেকে UPI হবে আরও দ্রুত
এই প্রস্তাবের পাশাপাশি UPI ব্যবহারকারীদের জন্য আরেকটি বড় সুখবর এসেছে। আগামী ১৬ জুন, ২০২৫ থেকে ইউপিআই লেনদেনের সময় আরও কমে যাবে। যেখানে এখন একটি ট্রানজ্যাকশন সম্পন্ন হতে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগে, সেখানে নতুন নিয়মে তা মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই শেষ হবে।
এটি সম্ভব হচ্ছে NPCI-এর একটি নতুন নির্দেশিকার ফলে, যা বিভিন্ন UPI কার্যকলাপের জন্য API রেসপন্স টাইম কমানোর কথা বলছে। এর ফলে শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেন নয়, ব্যালান্স চেক, ইউপিআই পিন সেট করা কিংবা রিকোয়েস্ট ফর মানি প্রক্রিয়াও আরও দ্রুত হবে।
UPI-এর দুরন্ত সাফল্য
বর্তমানে UPI ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে UPI-এর মাধ্যমে মোট ১৮৫.৮৫ বিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬০.৫৬ ট্রিলিয়ন টাকা — যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, UPI-এর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও ব্যবহার কী হারে বাড়ছে। যদি ইউপিআই-তে অতিরিক্ত ছাড়ের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা ডিজিটাল ইকোনমিকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে।
সরকারের এই সম্ভাব্য পদক্ষেপ একদিকে যেমন ডিজিটাল পেমেন্টকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে, তেমনি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য আর্থিক সাশ্রয়ও নিশ্চিত করবে। জুন মাসের বৈঠকের পর এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আপাতত, UPI ব্যবহারকারীদের জন্য আগামী ১৬ জুন একটি বড় পরিবর্তন অবশ্যই অপেক্ষা করছে — আরও দ্রুত, আরও স্মার্ট লেনদেনের অভিজ্ঞতা।