ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মধ্যে এখন জোর আলোচনা শুরু হয়েছে— নাইট ডিউটি অ্যালাউন্স (Night Duty Allowance) বা রাতের ডিউটির ভাতা কি ২০২৫ সালে নতুনভাবে সংশোধিত হবে? বিশেষ করে যখন ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Central Pay Commission বা 8th CPC) নিয়ে জল্পনা বাড়ছে, তখন কর্মচারীদের প্রত্যাশার কেন্দ্রে রয়েছে এই বিশেষ ভাতা।
নাইট ডিউটি অ্যালাউন্স কী?
সরকারি দপ্তরে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যেখানে রাতেও পরিষেবা চালু রাখতে হয়। যেমন— রেল, প্রতিরক্ষা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে যারা রাতের শিফটে কাজ করেন, তাঁদের জন্য আলাদা ভাতা হিসেবে দেওয়া হয় নাইট ডিউটি অ্যালাউন্স বা NDA। এটি মূলত কর্মীদের অতিরিক্ত চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির স্বীকৃতি হিসেবেই দেওয়া হয়।
বর্তমান নিয়ম
বর্তমানে কেন্দ্রীয় কর্মীরা প্রতি ঘণ্টা হিসেবে নির্দিষ্ট হারে নাইট ডিউটি অ্যালাউন্স পান। তবে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে, এই ভাতার হিসাব অনেক পুরোনো নিয়মের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত। কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিকে মাথায় রেখে নতুন হারে NDA নির্ধারণ করা উচিত।
২০২৪ সালের শেষে কর্মচারী ইউনিয়নগুলো অর্থ মন্ত্রককে একটি যৌথ স্মারকলিপি দেয়, যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “NDA-র হিসাব করতে গেলে বাস্তব মজুরি এবং বর্তমান ভাতা কাঠামোকে প্রাধান্য দিতে হবে। পুরনো সূত্রে হিসাব করলে কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।”
৮ম পে কমিশনের প্রত্যাশা
৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী NDA চালু থাকলেও তাতে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে এখন কর্মচারী মহলের আশা, ২০২৬ সালে কার্যকর হতে যাওয়া ৮ম পে কমিশনে এই ভাতার কাঠামোয় বড় সংশোধন আসবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ৮ম পে কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধিই নয়, বরং ভাতা কাঠামোও নতুনভাবে সাজাতে পারে। বিশেষ করে হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA), ট্রাভেল অ্যালাউন্স (TA)-এর পাশাপাশি নাইট ডিউটি অ্যালাউন্সকেও পুনর্নির্ধারণের জোর দাবি উঠছে।
কর্মচারীদের বক্তব্য
রেলের এক কর্মী বলেন, “আমরা প্রায়ই রাতভর কাজ করি। যাত্রী সুরক্ষা থেকে ট্রেন চালনা— সবকিছুই নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হয়। কিন্তু যে ভাতা পাই তা বাস্তব অবস্থার তুলনায় অনেক কম।”
আরেকজন প্রতিরক্ষা কর্মী জানান, “রাতে কাজ করা মানে শারীরিক ও মানসিক চাপ দুই-ই। ৮ম পে কমিশনে যদি নাইট ডিউটি অ্যালাউন্স সংশোধিত হয়, তবে তা শুধু আর্থিক সুবিধাই দেবে না, কর্মীদের কাজের মনোবলও বাড়াবে।”
সরকারের অবস্থান
সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে অর্থ মন্ত্রকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাতা কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। NDA-কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাবও টেবিলে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রক বলছে, “৮ম পে কমিশন গঠনের আগে কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। NDA নিয়েও কর্মীদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
২০২৫ সালকে কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে। কারণ, NDA সংশোধনের প্রশ্নটি শুধু ভাতা বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি কর্মীদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও কাজের মর্যাদার সঙ্গেও যুক্ত। যদি NDA-র হার বাড়ে, তবে রাত্রিকালীন শিফটে কাজ করা কর্মচারীরা সরাসরি উপকৃত হবেন।
সব মিলিয়ে, সরকারি কর্মীদের আশা এবার পূরণ হবে ৮ম বেতন কমিশনের মাধ্যমে। নাইট ডিউটি অ্যালাউন্সের পুনর্নির্ধারণ হলে তা শুধু আর্থিক স্বস্তিই নয়, কর্মক্ষেত্রে নতুন অনুপ্রেরণাও যোগাবে। এখন কেবল অপেক্ষা— সরকার কবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করে।