বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার নিয়ে সরকারের নয়া নির্দেশ

ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত স্পষ্টীকরণে জানিয়েছে যে, কোনও ভারতীয় সংস্থা যদি এমন একটি খাতে ব্যবসা করে যেখানে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) নিষিদ্ধ, তাহলে সেই…

FDI-Restricted Sectors Without Ownership Change

ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত স্পষ্টীকরণে জানিয়েছে যে, কোনও ভারতীয় সংস্থা যদি এমন একটি খাতে ব্যবসা করে যেখানে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) নিষিদ্ধ, তাহলে সেই সংস্থা তার বিদ্যমান বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে, যদি শেয়ারহোল্ডিং স্ট্রাকচারে কোনও পরিবর্তন না ঘটে।

শেয়ারহোল্ডিং স্ট্রাকচারে পরিবর্তন না হলে অনুমতি:

শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংবর্ধন বিভাগ (DPIIT) এই মর্মে এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, “একটি ভারতীয় সংস্থা, যা এমন কোনও খাতে যুক্ত যেখানে FDI নিষিদ্ধ, তারা তাদের পূর্ব-বিদ্যমান বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে, শর্ত থাকে যে এই বোনাস শেয়ার ইস্যুর ফলে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার কাঠামোতে কোনও রকম পরিবর্তন আসবে না।”

এই নির্দেশনা FDI নীতিতে স্পষ্টভাবে সংযুক্ত হয়েছে। এটি বোঝায় যে, FDI নিষিদ্ধ খাতে থাকা সংস্থাগুলিও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে তাদের বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট আইন ও নিয়ম:

সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বোনাস শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সমস্ত আইন, বিধি, নিয়ম ও নির্দেশিকা যথাযথভাবে মানতে হবে। অর্থাৎ, শেয়ার ইস্যু করলেও তা যেন কোনওভাবেই নিষিদ্ধ FDI নিয়ম ভঙ্গ না করে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

FDI প্রবাহ ও খাতভিত্তিক সীমাবদ্ধতা

বর্তমানে অধিকাংশ খাতেই FDI ‘অটোমেটিক রুট’-এর মাধ্যমে অনুমোদিত, অর্থাৎ সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে টেলিকম, মিডিয়া, ফার্মাসিউটিক্যালস, ও ইন্স্যুরেন্সের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হয়। এগুলিকে ‘গভর্নমেন্ট অ্যাপ্রুভাল রুট’ বলা হয়।

এর পাশাপাশি কিছু সংবেদনশীল খাতে সম্পূর্ণভাবে FDI নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে:

  • লটারি ব্যবসা
  • জুয়া ও বাজি খেলা
  • চিট ফান্ড
  • নিধি কোম্পানি
  • রিয়েল এস্টেট ব্যবসা (কিছু নির্দিষ্ট অংশ ব্যতীত)
  • তামাকজাত পণ্য (যেমন: সিগারেট, চুরুট, সিগার)

এই খাতগুলোতে কোনও রকম বিদেশি পুঁজির প্রবেশই অনুমোদিত নয়।

Advertisements

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব:

ভারতের অর্থনীতিতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিপুল পুঁজি প্রয়োজন, এবং সেই প্রয়োজনে FDI একটি বড় উৎস হিসেবে কাজ করে।

এছাড়াও, FDI প্রবাহ ভারতে পেমেন্ট ব্যালান্সকে মজবুত করে এবং ভারতীয় মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। অতীতে দেখা গেছে, যখন FDI প্রবাহ বেড়েছে, তখন বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং প্রযুক্তিগত স্থানান্তরও ঘটেছে।

নিষিদ্ধ খাতে বিদেশি অংশীদারদের জন্য ইতিবাচক বার্তা:

সরকারের এই সাম্প্রতিক নির্দেশনা এমন সব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা যারা পূর্বে এমন খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন যেখানে এখন FDI নিষিদ্ধ। যদিও তারা নতুন করে কোনও বিনিয়োগ করতে পারবেন না, কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে যদি বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হয়, তাহলে তারাও তাতে অংশ নিতে পারবেন এবং শেয়ারহোল্ডার হিসেবে তাদের অবস্থান বজায় থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি সুশৃঙ্খল নীতিগত পদক্ষেপ যা ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা এবং পূর্বের বিনিয়োগকারীদের প্রতি দায়িত্বশীলতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

এই নির্দেশনার মাধ্যমে সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। একদিকে, নিষিদ্ধ খাতগুলোতে নতুন FDI প্রবেশ রোধ করা হয়েছে, অপরদিকে পূর্ব-বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে রেখে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা ভারতীয় বিনিয়োগ পরিবেশে নীতিগত স্থিরতা এবং আইনি স্পষ্টতার দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।