দীপাবলি উপহারে সরকারি খরচে নিষেধাজ্ঞা জারি করল অর্থ মন্ত্রক

এবার থেকে সরকারি দপ্তরে দীপাবলি বা অন্য কোনও উৎসব উপলক্ষে উপহার কেনায় সরকারি অর্থ খরচে রাশ টানল অর্থ মন্ত্রক। অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগ ১৯ সেপ্টেম্বর…

Government Spending on Gifts

এবার থেকে সরকারি দপ্তরে দীপাবলি বা অন্য কোনও উৎসব উপলক্ষে উপহার কেনায় সরকারি অর্থ খরচে রাশ টানল অর্থ মন্ত্রক। অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগ ১৯ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে, যাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে—কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, বিভাগ ও তাদের অধীনস্থ সংস্থা, এমনকি পাবলিক সেক্টর ইউনিট (PSU), রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান—কেউই সরকারি খরচে উৎসবের উপহার কিনতে পারবে না। নির্দেশটি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।

ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযমে জোর

অর্থ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনসাধারণের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে—“আর্থিক শৃঙ্খলা ও জনসম্পদের বিচক্ষণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করার প্রয়াসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, দীপাবলি বা অন্যান্য উৎসবে উপহার ও সংশ্লিষ্ট সামগ্রী কেনায় কোনও ব্যয় বরাদ্দ করা যাবে না।”

   

এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন ব্যয় বিভাগের যুগ্মসচিব পি.কে. সিংহ। নির্দেশটি সচিব (ব্যয়)-এর অনুমোদনের পর জারি করা হয়েছে এবং তা সকল মন্ত্রক ও দপ্তরের সচিব এবং আর্থিক উপদেষ্টাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এটি সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক সংস্থার সঙ্গেও শেয়ার করা হয়েছে, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে এই নির্দেশ পৌঁছে দিতে পারে।

দীর্ঘদিনের রীতি বন্ধ হতে চলেছে Government Spending on Gifts

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উৎসবের সময়ে উপহার বিতরণের একটি রীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছিল। দীপাবলি বা অন্য কোনও উৎসবের আগে মন্ত্রক ও দপ্তরের কর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের উপহার দেওয়া হত। তবে বহুদিন ধরেই এই খরচকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বলে সমালোচনা করা হচ্ছিল। অর্থ মন্ত্রকের নতুন সিদ্ধান্তে এবার সেই প্রথার অবসান ঘটল।

সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই সিদ্ধান্তে আর্থিক সম্পদের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে বার্তা দেওয়া হল—জনগণের করের টাকা দিয়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ নয়, বরং তা ব্যয় করতে হবে অগ্রাধিকারমূলক খাতে, যেমন—অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচিতে।

Advertisements

সরকারের আর্থিক বার্তা

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু উৎসবকেন্দ্রিক ব্যয় রোধের জন্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে এক ধরনের ‘মিতব্যয়িতা’র বার্তা বহন করছে। গত কয়েক বছর ধরে সরকার নানা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে। চলতি বছরের বাজেট প্রস্তাবেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার স্পষ্ট করেছে যে, প্রতিটি টাকা সঠিক খাতে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যদিও দীপাবলি বা অন্য উৎসবের উপহার বিতরণে সরকারি ব্যয় তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল, তবে প্রতীকী দিক থেকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কারণ এই নির্দেশ সরকারি দপ্তরগুলিকে বার্তা দিচ্ছে—অপচয়ের দিন শেষ, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখাই এখন মূল লক্ষ্য।

ভবিষ্যতের প্রভাব:

সরকারি কর্মীদের একাংশ হয়তো উৎসবের সময়ে প্রথাগত উপহার না-পাওয়ায় হতাশ হবেন। তবে কেন্দ্রের মতে, সামগ্রিকভাবে এই সিদ্ধান্ত জনগণের ট্যাক্সের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে। তাছাড়া, এই উদ্যোগ অন্যান্য সংস্থাকেও আর্থিক সংযম বজায় রাখার প্রেরণা দিতে পারে।

সব মিলিয়ে, অর্থ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তে দীপাবলি কিংবা অন্য কোনও উৎসবে আর সরকারি দপ্তরে উপহারের ঝলক দেখা যাবে না। এর পরিবর্তে সরকারের লক্ষ্য—প্রতিটি পয়সা যেন দেশের উন্নয়নে এবং জনগণের স্বার্থে সঠিকভাবে কাজে লাগে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News