২০২৫ সাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন সরকারি স্কিমে নতুন সুবিধা ও পরিবর্তনের ঘোষণা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দু’পক্ষই নাগরিকদের আর্থিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউনিয়ন বাজেট ২০২৫-২৬-এ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ নতুন স্কিম যেমন সক্ষম আঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ ২.০ প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ ঘোষণা করেছেন, যা ৮ কোটি শিশু, ১ কোটি স্তন্যদানকারী মা এবং গর্ভবতী মহিলা, এবং ২০ লক্ষ কিশোরী মেয়েকে পুষ্টিকর সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়া, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (এবিপিএমজে)-এর সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৭০ বছরের উপরে সকল বয়স্ক নাগরিককে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কভারেজ দেওয়া হবে, যা প্রায় ৬ কোটি বয়স্ককে উপকৃত করবে। এই স্কিমগুলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
Government Schemes 2025: ২০২৫ সাল থেকে চালু হওয়া বা সম্প্রসারিত হওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও সুবিধার সারসংক্ষেপ।
নতুন সরকারি স্কিম ও সম্প্রসারণ:
২০২৫ সালে সরকারি স্কিমগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাউজিং স্কিম (পিএমএওয়াই)-এর সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য। পিএমএওয়াই-ইউ ২.০-এর অধীনে আরও ১ কোটি শহুরে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়ি কেনা, তৈরি বা ভাড়া নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হবে। এর মধ্যে অ্যাঙ্গিকার ২০২৫ ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে, যা ৫০০০-এর বেশি শহুরে স্থানীয় সংস্থায় চলবে এবং লোন মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা (আয়ুষ্মান ভারত)-এ কভারেজ ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, এবং ৭০ বছরের উপরে সকল বয়স্ককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ বাদে সারা দেশে প্রযোজ্য। স্টুডেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রামে ‘ভারতীয় ভাষা পুস্তক স্কিম’ চালু হয়েছে, যা স্কুল এবং উচ্চশিক্ষায় ডিজিটাল ভারতীয় ভাষার বই প্রদান করবে। এছাড়া, মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া স্কিমে ১০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা লোনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা মহিলা এবং এসসি/এসটি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।
আর্থিক সুবিধা:
সকল স্কিমে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) সিস্টেমের মাধ্যমে ভর্তুকি সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে, যা দুর্নীতি কমাবে এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে। সিনিয়র সিটিজেন এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বাড়তি পেনশন সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, আয়ুষ্মান ভারতের সম্প্রসারণে বয়স্কদের জন্য বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা কভারেজ যোগ করা হয়েছে। বাজেট ২০২৫-এ পিএম-কিসানের বরাদ্দ ৬০,০০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬৩,৫০০ কোটি করা হয়েছে, যাতে কৃষকরা বার্ষিক ৬,০০০ টাকা পাবেন। এছাড়া, সক্ষম আঙ্গনওয়াড়ি প্রোগ্রামে খরচের হার বাড়ানো হয়েছে, যা ৮ কোটি শিশু এবং মহিলাদের পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে। মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজের জন্য কাস্টমাইজড ক্রেডিট কার্ড চালু হয়েছে, যাতে ৫ লক্ষ টাকা লিমিট এবং প্রথম বছরে ১০ লক্ষ কার্ড জারি করা হবে।
কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়ন:
স্কিল ডেভেলপমেন্ট ২০২৫-এ নতুন প্রশিক্ষণ মডিউল চালু হয়েছে, যাতে ৪০ লক্ষ যুবককে দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এল আই স্কিমের অধীনে ৩.৫ কোটি চাকরির সৃষ্টি হবে, এবং আরডিআই স্কিমে ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রাইভেট সেক্টরে উদ্ভাবন বাড়ানো হবে। ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য কর সুবিধা এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, উদ্যম পোর্টালে রেজিস্টার্ড মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজের জন্য ১০ লক্ষ ক্রেডিট কার্ড জারি করা হবে। ইন্ডিয়াস্কিলস ২০২৫ রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে, যাতে ১৬-২৫ বছরের যুবকরা ৬৩টি দক্ষতা ক্যাটাগরিতে অংশ নিতে পারবে এবং বিজয়ীরা ওয়ার্ল্ডস্কিলস ২০২৬-এ ভারত প্রতিনিধিত্ব করবে।
কৃষক কল্যাণ:
পিএম-কিসান বর্ধিত হয়েছে, যাতে বার্ষিক আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং ৯.৭ কোটি কৃষককে ২০,৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নতুন কৃষি ইন্স্যুরেন্স স্কিমে প্রিমিয়াম কমানো হয়েছে, এবং ১০০টি জেলায় কম উৎপাদনশীলতা এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘রুরাল প্রসপারিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম’ চালু হয়েছে, যা রাজ্যের সঙ্গে অংশীদারিত্বে চালানো হবে এবং বিদ্যমান স্কিমের সমন্বয় ঘটাবে।
এই স্কিমগুলো শহর ও গ্রাম দুই ক্ষেত্রেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে, যা ৫ কোটির বেশি নাগরিককে সরাসরি উপকৃত করবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে প্রবেশাধিকার সহজ হবে, যা অর্থনীতিতে ৭.৮% জিডিপি বৃদ্ধির দিকে অবদান রাখবে। নারী উদ্যোক্তা ও কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন; উদাহরণস্বরূপ, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া এবং উদ্যোগিনি স্কিমে ১ কোটির বেশি মহিলা উদ্যোক্তা লোন পাবেন, যা ব্যবসা বৃদ্ধি এবং চাকরির সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। সামগ্রিকভাবে, এগুলো সামাজিক নিরাপত্তা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নতুন সুবিধাগুলি সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে গতিশীল করতেও সাহায্য করবে। ইন্ডিয়া স্কিলস রিপোর্ট ২০২৫ অনুসারে, ৫৫% গ্র্যাজুয়েট ২০২৫-এ চাকরির উপযোগী হবে, যা স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্কিমের ফলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়ুষ্মান ভারতের সম্প্রসারণ এবং পিএমএওয়াই-এর মতো উদ্যোগগুলো দারিদ্র্য হ্রাস করে এবং মহিলা ক্ষমতায়ন করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তবে, ফান্ডের সঠিক ব্যবহার এবং সচেতনতা বাড়ানো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।
সরকারি স্কিম ২০২৫ শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং দক্ষতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণের দিকে নজর দিচ্ছে। এই স্কিমগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে। তবে, এই সুবিধা পেতে আবেদন প্রক্রিয়া এবং যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। সরকারি স্কিমের বিস্তারিত নোটিফিকেশন ও আবেদন প্রক্রিয়া জানতে সরকারি ওয়েবসাইট যেমন pmay-urban.gov.in, pmjay.gov.in, pmkisan.gov.in এবং scholarships.gov.in নজরে রাখুন। এই উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত একটি সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারবে।