পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ IREDA বন্ডে কর সুবিধা ঘোষণা

নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতে তহবিল সংগ্রহে বড় ধরণের সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি লিমিটেড (IREDA)-এর বন্ডগুলিকে আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ৫৪ইসি ধারা অনুযায়ী…

Top 5 Profitable Investment Ideas for High Returns in Just 3 Months in 2025

নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতে তহবিল সংগ্রহে বড় ধরণের সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি লিমিটেড (IREDA)-এর বন্ডগুলিকে আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ৫৪ইসি ধারা অনুযায়ী কর সঞ্চয়ের মর্যাদা প্রদান করেছে। এই সিদ্ধান্ত ৯ জুলাই, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (সিবিডিটি) দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি আকারে ঘোষণা করা হয়েছে।

মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বন্ডগুলিকে ‘দীর্ঘমেয়াদি নির্দিষ্ট সম্পদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা তাদের দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভের অর্থ এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাবেন।

   

বিনিয়োগকারীর জন্য বড় সুবিধা: ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়:
আয়কর আইনের ৫৪ইসি ধারার অধীনে, যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা মূলধন লাভ থেকে আয় করে এবং সেই অর্থ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকার অনুমোদিত বন্ডে বিনিয়োগ করে, তবে সেই মূলধন লাভের উপর করের ছাড় পাওয়া যায়। এই নিয়মের আওতায় আইআরইডিএ বন্ডগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করায়, করদাতারা এক অর্থ বছরে সর্বাধিক ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধন লাভ কর থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন।
এই সুবিধাটি মূলত তাদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক, যারা দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ যেমন জমি, বাড়ি বা শেয়ার বিক্রির পর অর্জিত লাভকে করমুক্ত রাখতে চান এবং সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অবদান রাখতে ইচ্ছুক।

পরিষ্কার শক্তি প্রকল্পে তহবিলের নতুন রাস্তা:
নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রক (এমএনআরই) জানিয়েছে, এই বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ শুধুমাত্র বাণিজ্যিকভাবে টেকসই নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। প্রকল্পগুলো এমনভাবে বাছাই করা হবে যাতে সেগুলি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ ফেরত দিতে সক্ষম হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আইআরইডিএ আরও কম সুদে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে, যা সরাসরি ভারতের সবুজ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবে। তাছাড়া, এই পদক্ষেপ দেশের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নেওয়া উদ্যোগগুলির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আইআরইডিএর প্রতিক্রিয়া: যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত:
আইআরইডিএ-এর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দাস এই পদক্ষেপকে “যুগান্তকারী” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রক, নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রক এবং সিবিডিটি-কে ধন্যবাদ জানাই এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য। এই কর-ছাড়ের সুবিধা আইআরইডিএ-কে আরও বড় বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছতে সাহায্য করবে এবং আমাদের সবুজ অর্থায়নের ভূমিকা মজবুত করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই নীতি পরিবর্তন আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট অ-জীবাশ্মভিত্তিক ক্ষমতা স্থাপনের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

Advertisements

পটভূমি: ভারত সরকারের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি:
২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত COP26 সম্মেলনে ভারত তার ‘পঞ্চামৃত’ উদ্যোগের অধীনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে রয়েছে —
২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট অ-জীবাশ্ম ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন।
মোট শক্তি চাহিদার ৫০ শতাংশ নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে পূরণ।
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন এক বিলিয়ন টন কমানো।
জিডিপির নির্গমন ঘনত্ব ৪৫ শতাংশ হ্রাস করা।
২০৭০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমন অর্জন করা।
এই লক্ষ্যগুলির দিকে এগিয়ে যেতে হলে বড় মাপের অর্থায়নের প্রয়োজন, এবং সেখানেই আইআরইডিএ বন্ডের এই কর-ছাড়ের উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইতিবাচক প্রভাব:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর-ছাড়ের এই সুবিধার ফলে আইআরইডিএ আরও কম সুদে ঋণ পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি নিরাপদ এবং ট্যাক্স-স্মার্ট বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে এই বন্ডগুলি আকর্ষণীয় হবে। ফলে দেশের নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতের প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের কর সাশ্রয় করার সুযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই দেশের সবুজ অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে। নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতকে সমর্থন করতে এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট-জিরো নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

আইআরইডিএ বন্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও দেশের জলবায়ু অভিযানের অংশীদার হতে পারবে। এই উদ্যোগের ফলে ভারত বৈশ্বিক মঞ্চে একটি পরিবেশবান্ধব এবং দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।