২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (EPF) জমার উপর ৮.২৫ শতাংশ সুদের হার বহাল রাখার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এম সম্পর্কে EPFO-কে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এর ফলে এবার EPF সদস্যদের অ্যাকাউন্টে এই সুদের টাকা দ্রুতই জমা পড়বে।
এই সিদ্ধান্তের সূত্রপাত হয়েছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় EPFO-র কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠক। সেই বৈঠকে ৮.২৫ শতাংশ সুদের হার বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পেল।
গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪-এ EPFO সুদের হার ৮.১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮.২৫ শতাংশ করেছিল, যা ছিল একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং যার ফলে দেশের প্রায় ৭ কোটির বেশি EPF সদস্য উপকৃত হয়েছিলেন। এবারও সেই হার বহাল থাকায় সদস্যদের মধ্যে সন্তোষ বিরাজ করছে।
EPFO সদস্যসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি
শুধু সুদের হার নয়, EPFO সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের পে-রোল বা বেতন তালিকা সম্পর্কিত তথ্যেও উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে EPFO-র নেট সদস্যসংখ্যা বেড়েছে ১৪.৫৮ লক্ষ, যা ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তুলনায় ১.১৫ শতাংশ বেশি।
এই নতুন সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৭.৫৪ লক্ষ জন হচ্ছেন একেবারে নতুন সাবস্ক্রাইবার, অর্থাৎ যারা প্রথমবারের মতো ইপিএফের আওতায় এসেছেন। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর তুলনায় এটি ২.০৩ শতাংশ এবং মার্চ ২০২৪-এর তুলনায় ০.৯৮ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি।
এই বৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান রাখছে ১৮–২৫ বছর বয়সী যুব সমাজ। শুধু মার্চ মাসেই এই বয়সগোষ্ঠীর ৪.৪৫ লক্ষ ব্যক্তি ইপিএফ স্কিমে যোগ দিয়েছেন, যা ওই মাসে মোট নতুন সদস্যের ৫৮.৯৪ শতাংশ।
তাছাড়া এই বয়স গোষ্ঠীর নেট পে-রোল সংযোজন হয়েছে প্রায় ৬.৬৮ লক্ষ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ইপিএফ সচেতনতা বৃদ্ধি
এই তথ্য থেকে পরিষ্কার, দেশের তরুণ কর্মীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন এবং তারা ইপিএফ-এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা এবং ইপিএফও-র ধারাবাহিক প্রচারাভিযানের ফলে এই সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা বজায় রয়েছে।”
শুধু বেসরকারি ক্ষেত্র নয়, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থার মধ্যেও ইপিএফে যোগদানের হার বেড়েছে। অনেক সংস্থাই এখন কর্মচারীদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে আগ্রহী এবং নিয়মিত ইপিএফ অবদান জমা দিচ্ছে।
ইপিএফও-র ডিজিটাল রূপান্তর এবং গ্রাহকসেবার উন্নতি
ইপিএফও ডিজিটাল পরিষেবা বৃদ্ধির দিকেও জোর দিয়েছে। বর্তমানে ইপিএফ সদস্যরা অনলাইনে ব্যালেন্স চেক, পাসবই ডাউনলোড, ক্লেইম সাবমিশন এবং আপডেটের সুবিধা পাচ্ছেন। এই ব্যবস্থার ফলে সদস্যদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও আস্থা বেড়েছে।
এছাড়া UAN (Universal Account Number)-এর মাধ্যমে একজন কর্মী চাকরি পরিবর্তনের পরেও তার প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট একই রাখতে পারছেন, যা ফান্ড ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করেছে।
চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগ মাধ্যম
বর্তমান সময়ে যখন ব্যাঙ্কের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং শেয়ার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তখন ইপিএফ ৮.২৫ শতাংশ সুদের হার একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ইপিএফ একটি নির্ভরযোগ্য রিটার্ন প্রদান করে থাকে এবং এর সুদ আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত হওয়ায় এটি কর সাশ্রয়ের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিকভাবে, কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সুদের হার স্থিতিশীল রাখা এবং ইপিএফও-র পক্ষ থেকে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন — এই দুইয়ের সমন্বয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ কর্মী সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসছেন, যা একটি ইতিবাচক আর্থিক ও সামাজিক বার্তা দিচ্ছে।
এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী দিনে দেশের শ্রমবাজারে আরও সুসংহত সামাজিক নিরাপত্তার পরিকাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।