আদালতের রায়ের জেরে গুগলের শেয়ার ৯% বেড়ে ২৩১ ডলার

মার্কিন আদালতের সাম্প্রতিক এক ঐতিহাসিক রায়ে প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল (Google) বিশাল স্বস্তি পেয়েছে। বহুল আলোচিত অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় আদালত জানিয়েছে, গুগলকে তার জনপ্রিয় ব্রাউজার ক্রোম (Chrome)…

Google

মার্কিন আদালতের সাম্প্রতিক এক ঐতিহাসিক রায়ে প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল (Google) বিশাল স্বস্তি পেয়েছে। বহুল আলোচিত অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় আদালত জানিয়েছে, গুগলকে তার জনপ্রিয় ব্রাউজার ক্রোম (Chrome) এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড (Android) বিক্রি করতে হবে না। তবে আদালত কোম্পানির ওপর একাধিক জরিমানা ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে কিছু তথ্য ভাগ করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

মার্কিন বিচারপতি অমিত মেহতা (Judge Amit Mehta) এই মামলার মূল রায়ে জানান, গুগল যে সার্চ মার্কেট এবং বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে, তা আইনবিরুদ্ধ। তবে তিনি সরকারের প্রস্তাবিত সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ— অর্থাৎ ক্রোম ও অ্যান্ড্রয়েড বিক্রি করার নির্দেশ— প্রত্যাখ্যান করেন।

   

এই সিদ্ধান্তের পর বিনিয়োগকারীরা উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে দেন বাজারকে। গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ার একদিনেই ৯ শতাংশ বেড়ে ২৩১ ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ক্রোম বা অ্যান্ড্রয়েড আলাদা করে বিক্রি করতে হতো, তবে কোম্পানির ব্যবসায়িক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারত। আদালতের এই রায়ে সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে।

বিচারপতি মেহতা বলেন, “গুগল একটি একচেটিয়া প্রতিষ্ঠান এবং নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তারা সে ভাবেই কাজ করেছে।” তিনি আরও যোগ করেন যে, ক্রোম ও অ্যান্ড্রয়েড বিক্রি না করলেও গুগলকে প্রতিযোগীদের জন্য বাজারে সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। এর অংশ হিসেবেই আদালত গুগলকে বাধ্য করেছে, সার্চ ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে।

মার্কিন ন্যায়বিভাগ (DOJ) এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ২০২০ সালে গুগলের বিরুদ্ধে প্রথম বড় অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা দায়ের করে। অভিযোগ ছিল, গুগল শারম্যান অ্যান্টিট্রাস্ট আইন (Sherman Antitrust Act, 1890) ভঙ্গ করে অবৈধভাবে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে।

সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে অ্যাপল ও বিভিন্ন মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুগলের একচেটিয়া চুক্তি। এসব চুক্তির মাধ্যমে গুগল নিশ্চিত করত যে, অধিকাংশ ডিভাইস ও ব্রাউজারে তাদের সার্চ ইঞ্জিনই ডিফল্ট হিসেবে সেট করা থাকবে।

২০২০ সালের মামলা (সার্চ মনোপলি মামলা): মার্কিন ন্যায়বিভাগ এবং ১১টি অঙ্গরাজ্য অভিযোগ আনে গুগলের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিচারপতি মেহতা রায় দেন, গুগল অবৈধভাবে সার্চ বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে।

২০২৩ সালের মামলা (অ্যাড টেক মনোপলি মামলা): পূর্ব ভার্জিনিয়ার জেলা আদালতে এই মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ ছিল, গুগল ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের প্রযুক্তিগত বাজারে নিজেদের পুরো আধিপত্য কায়েম করেছে।

Advertisements

এই বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি বা অ্যাড টেক স্ট্যাক বলতে বোঝানো হয় বিজ্ঞাপন সার্ভার, এক্সচেঞ্জ ও নিলামভিত্তিক ব্যবস্থা, যেখানে গুগল ডাবলক্লিক (DoubleClick) সহ একাধিক কোম্পানি অধিগ্রহণ করে বাজার দখল করে। আদালত প্রমাণ পেয়েছে, গুগল এই বাজারে প্রতিযোগিতাকে দমন করেছে এবং প্রকাশক ও ভোক্তাদের ক্ষতি করেছে।

২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল এই মামলার রায়ে আদালত জানায়, গুগল আসলেই প্রতিযোগিতা বিরোধী কাজ করেছে। যদিও এখানকার প্রতিকারের ধাপ (remedies phase) এখনও শেষ হয়নি। অর্থাৎ আদালত কী ধরনের শাস্তি বা বাজারে পরিবর্তন আনবে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে।

ন্যায়বিভাগ শুরু থেকেই চাইছিল, গুগলকে ভেঙে একাধিক আলাদা কোম্পানিতে পরিণত করা হোক। বিশেষ করে ক্রোম ব্রাউজার ও অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম আলাদা করে দিলে গুগলের সার্চ আধিপত্য ভেঙে পড়ত। কিন্তু আদালত মনে করেছে, এত বড় পদক্ষেপে ব্যবহারকারী ও প্রযুক্তি খাত অস্থির হয়ে পড়তে পারে। তাই আপাতত এই পথ এড়ানো হয়েছে।

তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গুগলকে ভবিষ্যতে আরও স্বচ্ছভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য যেমন বিজ্ঞাপনের দাম, সার্চ ডেটা ইত্যাদির কিছু অংশ প্রতিযোগীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

গুগল অবশ্য আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কোম্পানির মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা খুশি যে আদালত প্রযুক্তির স্বাভাবিক অগ্রগতি বজায় রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিই এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভোক্তাদের আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তবে সমালোচকদের মতে, আদালতের জরিমানা ও তথ্য ভাগাভাগির নির্দেশ যথেষ্ট নয়। তাদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত গুগলকে আলাদা কোম্পানিতে বিভক্ত না করা হবে, ততক্ষণ প্রকৃত অর্থে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছে…