ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে আসছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ!

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি জায়গা জুড়ে অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনম শহর আজ একটি বড় খবরের কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। গুগল (Google) বিশ্বের প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একটি, এই শহরে এশিয়ার…

Google Investment in Visakhapatnam Data Center to Boost Andhra Pradesh’s Digital Economy with Renewable Energy

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি জায়গা জুড়ে অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনম শহর আজ একটি বড় খবরের কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। গুগল (Google) বিশ্বের প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একটি, এই শহরে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই বিনিয়োগটি অন্ধ্র প্রদেশকে শুধুমাত্র ভারতের ডিজিটাল মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে তুলবে না, বরং এটি স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি বিপ্লব আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল, ৩০ জুলাই, রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা আজ সকাল থেকে সামাজিক মাধ্যমে এবং বাণিজ্যিক চক্রে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

প্রকল্পের বিস্তারিত
গুগলের এই ৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলার পুনর্জননযোগ্য শক্তির জন্য বরাদ্দ করা হবে, যা এই ডেটা সেন্টারকে পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হবে। এই প্রকল্পটি বিশাখাপত্তনমের মধুরাওয়াদা অঞ্চলে নির্মিত হবে এবং এটি ১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্ষমতার একটি ডেটা সেন্টার হবে, যা এশিয়ায় সর্বাধিক ক্ষমতাধারী হবে। এই বিনিয়োগটি আলফাবেট (গুগলের মাতৃসংস্থা) এর ভারতের প্রথম সরাসরি ডেটা সেন্টার প্রকল্প হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর বিস্তারে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে। প্রকল্পটির অংশ হিসেবে গুগল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-মুক্ত অবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

   

অন্ধ্র প্রদেশের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী নারা লোকেশ, যিনি সাম্প্রতিককালে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, এই প্রকল্পের উপর সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন যে রাজ্যে ইতিমধ্যে ১.৬ গিগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টারের বিনিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে ৬ গিগাওয়াট ক্ষমতার লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এই উন্নয়নটি বিশাখাপত্তনমকে ভারতের একটি প্রধান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব
এই বিনিয়োগটি অন্ধ্র প্রদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প থেকে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে হাজার হাজার চাকরি সৃষ্টি হবে, যার মধ্যে রয়েছে নির্মাণ, প্রকৌশল, এবং আইটি কৌশলগত কাজ। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ, যারা প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে চান। এছাড়াও, হোটেল, খাদ্য পরিবেশন, এবং খুচরা ব্যবসায় বৃদ্ধি হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

Advertisements

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নায়ডু এই উন্নয়নটিকে তাঁর সরকারের “ডিজিটাল অন্ধ্র প্রদেশ” দৃষ্টিপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছেন। ২০১৪ সালে রাজ্যের বিভাজনের পর হায়দ্রাবাদ হারানোর পর থেকে নায়ডু স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং এই গুগলের বিনিয়োগ তাঁর সেই প্রচেষ্টার একটি বড় সাফল্য। তিনি বলেছেন, “বিশাখাপত্তনম আমাদের অর্থনৈতিক প্রগতির ইঞ্জিন হবে, এবং এই প্রকল্পটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন দরজা খুলে দেবে।”

প্রতিক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ
এই খবর শোনার পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু ব্যবহারকারী এই বিনিয়োগকে “অন্ধ্র প্রদেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত” হিসেবে অভিবাদন করেছেন, যখন কিছু ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন যে এই প্রকল্পটি কতটা বাস্তবসম্মত, কারণ গত বছরের ডিসেম্বরে এই ধরনের একটি ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে, রয়টার্সের প্রতিবেদন এবং সরকারি সূত্রের তথ্য এই প্রকল্পের গুরুত্ব ও গতি নিশ্চিত করেছে।