ভারতের বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI) স্বাধীনতা দিবসের দিন (১৫ আগস্ট, ২০২৫) থেকে সব মেয়াদের মার্জিনাল কস্ট অফ ফান্ডস-বেসড লেন্ডিং রেট (MCLR)-এ ৫ বেসিস পয়েন্ট (bps) বা ০.০৫ শতাংশ হ্রাসের ঘোষণা করেছে। একই দিনে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক (IOB)-ও তাদের সুদের হার সব মেয়াদে ১০ বেসিস পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের জন্য সামান্য হলেও ইএমআই কমবে এবং কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
এসবিআই-এর নতুন সুদের হার কাঠামো:
এসবিআই-এর এই সংশোধিত সুদের হার কার্যকর হবে ১৫ আগস্ট থেকে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, রাতারাতি ও এক মাসের এমসিএলআর (MCLR) ৭.৯৫% থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে ৭.৯০%। তিন মাসের হার ৮.৩৫% থেকে কমে ৮.৩০% এবং ছয় মাসের হার ৮.৭০% থেকে কমে ৮.৬৫%।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এক বছরের এমসিএলআর, যা গৃহঋণ ও অন্যান্য খুচরা ঋণের মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তা ৮.৮০% থেকে কমে ৮.৭৫% হয়েছে। একইভাবে দুই বছরের এমসিএলআর ৮.৮৫% থেকে কমে ৮.৮০% এবং তিন বছরের হার ৮.৯০% থেকে কমে ৮.৮৫% হয়েছে।
মেয়াদ পূর্ববর্তী হার (%) সংশোধিত হার (%)
রাতারাতি ৭.৯৫ ৭.৯০
এক মাস ৭.৯৫ ৭.৯০
তিন মাস ৮.৩৫ ৮.৩০
ছয় মাস ৮.৭০ ৮.৬৫
এক বছর ৮.৮০ ৮.৭৫
দুই বছর ৮.৮৫ ৮.৮০
তিন বছর ৮.৯০ ৮.৮৫
গৃহঋণ গ্রাহকদের জন্য কী প্রভাব পড়বে?
এসবিআই-এর এই সুদের হার হ্রাসে গৃহঋণগ্রহীতারা সামান্য স্বস্তি পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ৩০ লাখ টাকার হোম লোন ২০ বছরের জন্য নিয়ে থাকেন, তবে মাসিক কিস্তি বা ইএমআই প্রায় ৯০–১০০ টাকা কমবে। যদিও এই হ্রাস খুব বেশি নয়, তবুও দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে এবং ঋণগ্রহীতাদের কিছুটা চাপ কমাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণের সুদের হার যত কম হবে, নতুন ঋণগ্রহীতাদের জন্য তত সুবিধা হবে। পুরনো ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রেও, ব্যাংকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বা সুদের হার পুনঃনির্ধারণের (reset) সময়ে এই সুবিধা কার্যকর হতে পারে।
রিজার্ভ ব্যাংকের অবস্থান:
উল্লেখযোগ্য যে, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সম্প্রতি আগস্ট মাসের মৌদ্রিক নীতি কমিটি (MPC) বৈঠকে রেপো রেট ৫.৫৫% অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নিরপেক্ষ (neutral) অবস্থান বজায় রেখেছে। এর আগে টানা তিন দফায় রিজার্ভ ব্যাংক ৫০ বেসিস পয়েন্ট ও দু’বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদের হার কমিয়েছিল।
এই প্রেক্ষাপটে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক এসবিআই-এর সুদের হার হ্রাসকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঋণের চাহিদা বাড়াতে এবং অর্থনীতির প্রবাহ মসৃণ করতে বড় সরকারি ব্যাংকগুলির এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত:
এসবিআই-এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক (IOB) তাদের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকের অ্যাসেট লাইয়াবিলিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (ALCO) ১১ আগস্ট বৈঠকের পর ১০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি কার্যকর হবে ১৫ আগস্ট থেকে।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী:
রাতারাতি এমসিএলআর ৮.১৫% থেকে কমে ৮.০৫%
এক মাসের হার ৮.৪০% থেকে ৮.৩০%
তিন মাসের হার ৮.৫৫% থেকে ৮.৪৫%
ছয় মাসের হার ৮.৮০% থেকে ৮.৭০%
এক বছরের হার ৯.০০% থেকে ৮.৯০%
এই হ্রাসও ঋণগ্রহীতাদের জন্য সামান্য স্বস্তি বয়ে আনবে। বিশেষ করে যেসব গ্রাহক দীর্ঘমেয়াদী হোম লোন বা গাড়ির ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের মাসিক কিস্তিতে কিছুটা হ্রাস দেখা যাবে।
বাজারে সম্ভাব্য প্রভাব:
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসবিআই ও আইওবি-র এই সিদ্ধান্ত অন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলিকেও চাপের মুখে ফেলবে এবং আগামী দিনে তারা-ও সুদের হার কমাতে বাধ্য হতে পারে। এর ফলে প্রতিযোগিতার পরিবেশে গ্রাহকরা বেশি লাভবান হবেন।
যদিও সুদের হার হ্রাস খুব বড় পরিমাণে নয়, তবুও এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। ঋণের খরচ সামান্য কমলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও বেশি ঋণ নিতে আগ্রহী হবেন। এর ফলে ভোগ ও বিনিয়োগ উভয়ই বাড়বে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
এসবিআই এবং আইওবি-র এই যৌথ সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে, বড় সরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চাপ কিছুটা লাঘব করতে চায়। যদিও ৫ বা ১০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসে বড় পরিবর্তন আসে না, তবে ধারাবাহিকভাবে সুদের হার কমানো হলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ইতিবাচক হবে।
গৃহঋণ, গাড়ি ঋণ কিংবা ব্যক্তিগত ঋণ—সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের কাছে একটি ইতিবাচক খবর হিসেবে প্রতিভাত হবে।