কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য সুখবর! এপ্রিলে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা

কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আগামী মাসের শুরুতে এর কার্যপরিধি (টার্মস অফ রেফারেন্স) মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে…

good-news-for-central-employees-8th-pay-commission-formation-announcement-in-april

কেন্দ্রীয় সরকার অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আগামী মাসের শুরুতে এর কার্যপরিধি (টার্মস অফ রেফারেন্স) মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা মানিকন্ট্রোলকে জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পর একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, যার ফলে কমিশন এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগ (DoPT)-এর কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিল যে কমিশনের কোন কোন দিকে সুপারিশ করা উচিত। একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা মানিকন্ট্রোলকে জানিয়েছেন, কিছু পরামর্শ এসে পৌঁছেছে এবং বাকিগুলির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

   

কী হবে সময়সীমা?
একজন কর্মকর্তার মতে, অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) তার কার্যপরিধি চূড়ান্ত হওয়ার পর কার্যক্রম শুরু করবে। যদি এই মাসের শেষে এটি গঠন করা হয়, তবে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে এর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়া এক বছরেরও কম সময়ে শেষ হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, পূর্ববর্তী বেতন কমিশনগুলি তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে এক বছরের বেশি সময় নিয়েছে।

Advertisements

কী হবে প্রভাব?
অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) প্রস্তাবিত বেতন সংশোধন ৫০ লক্ষেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের প্রভাবিত করবে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা কর্মীরাও রয়েছেন। এটি সরকারি ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, যেমনটি সপ্তম বেতন কমিশনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সালে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার পর ২০১৭ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বেড়েছিল। তবে, অষ্টম বেতন কমিশনের আর্থিক প্রভাব ২০২৭ অর্থবছর থেকে অনুভূত হবে।

আসন্ন বেতন সংশোধন ভোগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি বেতন কমিশন গঠিত হয়েছে, যার শেষটি ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল। প্রতিটি কমিশন সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো, ভাতা এবং পেনশন সুবিধা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা জনসাধারণের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সিদ্ধান্ত:
এদিকে, সরকার এখনই মহার্ঘ ভাতা (DA) এবং মহার্ঘ ত্রাণ (DR)-এর ৫০ শতাংশ মূল বেতন এবং পেনশনের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী ২০ মার্চ রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এই বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিয়েছেন।

অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) প্রেক্ষাপট:
সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও সুবিধা সংশোধনের জন্য প্রতি দশকে একবার বেতন কমিশন গঠন করা হয়। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়ার পর থেকে কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা নতুন কমিশনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অষ্টম বেতন কমিশনের গঠন এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবে। কমিশনের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে এটি বেতন, ভাতা এবং পেনশনের সব দিক বিবেচনা করতে পারে।

আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব:
অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) সুপারিশ কার্যকর হলে সরকারের ব্যয় বাড়বে, যা ২০২৭ অর্থবছর থেকে প্রভাব ফেলবে। সপ্তম বেতন কমিশনের মতো, এটি সরকারি কর্মচারীদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে ভোগ বৃদ্ধি করবে। এর ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে খুচরা বিক্রি এবং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। তবে, এই বর্ধিত ব্যয় সরকারের বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা অষ্টম বেতন কমিশনের কাছ থেকে বেতন বৃদ্ধি, উন্নত ভাতা এবং পেনশন সুবিধার আশা করছেন। মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এই সংশোধন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্যও এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তাদের কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী উপযুক্ত সুবিধা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি বেতন কমিশন সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। প্রথম বেতন কমিশন ১৯৪৬ সালে গঠিত হয়েছিল, এবং সপ্তম কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয়। প্রতিটি কমিশন বেতন কাঠামোকে আধুনিক করেছে এবং কর্মচারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। অষ্টম বেতন কমিশনও এই ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) কার্যপরিধি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানোর পর এর গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু হলে কমিশন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ তৈরি করবে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিবেদন জমা পড়লে সরকার তা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেবে।

এই কমিশন সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে আসবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। তবে, এর আর্থিক প্রভাব মোকাবিলায় সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে।