কেন্দ্রের GST প্রস্তাবে সমর্থন জানাল GoM, আসছে দুই স্ল্যাব ব্যবস্থা

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জিএসটি (GST) রেট র‍্যাশনালাইজেশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কেন্দ্রের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানাল রাজ্যগুলি। কেন্দ্র চেয়েছিল বর্তমানের চার-স্তরবিশিষ্ট জিএসটি কাঠামোকে সরল করে মাত্র…

gst regime

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জিএসটি (GST) রেট র‍্যাশনালাইজেশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কেন্দ্রের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানাল রাজ্যগুলি। কেন্দ্র চেয়েছিল বর্তমানের চার-স্তরবিশিষ্ট জিএসটি কাঠামোকে সরল করে মাত্র দুটি প্রধান স্ল্যাবে নামিয়ে আনা হোক। বৈঠকে উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রীদের সম্মতিতেই এই দিকেই এগোচ্ছে দেশ।

বর্তমানে দেশে জিএসটি কাঠামোতে ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%—এই চারটি হার কার্যকর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, এই বহুস্ল্যাব ব্যবস্থা জটিলতা বাড়াচ্ছে, করদাতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশকে কম বন্ধুত্বপূর্ণ করছে। সেই কারণে এবার প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র দুটি স্ল্যাব—

   

৫%: মূলত কৃষি, সাধারণ ভোগ্যপণ্য ও ‘মেরিট গুডস’ হিসাবে চিহ্নিত সামগ্রী
১৮%: অধিকাংশ মানক পণ্য ও পরিষেবা
এছাড়াও ‘সিন গুডস’ বা বিলাসিতা ও ক্ষতিকর সামগ্রী যেমন তামাকজাত দ্রব্য, মদ, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস ও বিশেষভাবে লাক্সারি কার-এর ওপর ৪০% হারের কর বজায় থাকবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী। গঠিত ছয় সদস্যের গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স (GoM)-এ ছিলেন আরও বেশ

কয়েকজন রাজ্যের মন্ত্রী—
উত্তরপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী সুরেশ কুমার খন্না
রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য
কর্ণাটকের রাজস্বমন্ত্রী কৃষ্ণা বাইরে গৌড়া
কেরালার অর্থমন্ত্রী কে. এন. বালাগোপাল

সভার শুরুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্ট করে দেন, এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ, কৃষক, মধ্যবিত্ত এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উপর চাপ কমানো। একইসঙ্গে ব্যবসা-বান্ধব, স্বচ্ছ ও প্রবৃদ্ধিমুখী কর ব্যবস্থার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী—
বর্তমানে ১২% স্ল্যাবের প্রায় ৯৯% পণ্য ও পরিষেবাকে সরিয়ে ৫% হারে আনা হবে।
আবার ২৮% স্ল্যাবের প্রায় ৯০% পণ্য ও পরিষেবাকে কমিয়ে ১৮% হারে নিয়ে আসা হবে।
ফলে যেসব পণ্যে আগে ১২% কর দিতে হতো, সেগুলি এখন অনেক সস্তা হবে। একইভাবে ২৮% কর ধার্যের আওতায় থাকা বেশিরভাগ জিনিসেও দাম কমতে পারে। সাধারণ গৃহস্থালির ভোগ্যপণ্য, কৃষিজ সামগ্রী, কিছু পরিষেবা—সবই এর আওতায় আসবে।

Advertisements

বৈঠকে আলোচিত আরেকটি বড় প্রস্তাব ছিল—ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার প্রিমিয়ামের উপর জিএসটি মওকুফ। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে কেন্দ্রের প্রায় ৯,৭০০ কোটি টাকার বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। তবে অধিকাংশ রাজ্যই এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, বিমা সংস্থাগুলি যেন প্রকৃতপক্ষে এই করছাড়ের সুবিধা পলিসি হোল্ডার বা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়।

এই কর সংস্কারের ফলে—
ভোগ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে, যা সরাসরি স্বস্তি দেবে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষকে।
কৃষি খাত এবং MSME সেক্টরে চাপ কমবে, ফলে উৎপাদন ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে।
বহুস্ল্যাবের জটিলতা কমে কর প্রদান সহজ হবে, ফলে কমপ্লায়েন্স বাড়বে এবং কর ফাঁকি রোধে সহায়তা করবে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ভারতীয় করব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, বিলাসপণ্য ও ক্ষতিকর সামগ্রীর উপর উচ্চ কর বজায় রাখায় রাজস্ব ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
GoM-এর এই সুপারিশগুলি এখন যাবে GST কাউন্সিলের বৈঠকে। চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পরই কার্যকর হবে এই বড় সংস্কার। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হয়, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন দুই-স্ল্যাব কাঠামো চালু হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা চাই এই সংস্কার মানুষের উপকারে আসুক। তবে বিমা সংস্থাগুলির উপর কড়া নজরদারি থাকা দরকার, যাতে তারা করছাড়ের পুরো সুবিধা গ্রাহকদের দেয়।”

কেরালার অর্থমন্ত্রী কে. এন. বালাগোপালও জানান, কর সহজীকরণে সব রাজ্য একসঙ্গে এগোতে প্রস্তুত। একই সুরে উত্তরপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী সুরেশ কুমার খন্না বলেন, “এটি সাধারণ মানুষের জন্য ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হতে চলেছে।”

জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকেই “ওয়ান নেশন, ওয়ান ট্যাক্স”-এর কথা বলা হলেও বাস্তবে একাধিক হার বিদ্যমান ছিল। এবার কার্যত সেই লক্ষ্যপূরণের দিকেই এগোচ্ছে দেশ। দুই স্ল্যাবের কাঠামোতে পরোক্ষ কর ব্যবস্থা আরও সরল, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব হতে চলেছে।