মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ভারতের ৩২ বিলিয়ন ডলারের রত্ন ও জুয়েলারি (Gold Silver) শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে। এই শুল্ক, যা ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০%-করা হয়েছে, ভারতের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও জুয়েলারি রফতানি তীব্র পতনের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাইয়াম মেহরা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “আমরা এই শুল্ক বৃদ্ধির জন্য তেমন প্রস্তুত ছিলাম না। ২৫% শুল্ক যখন আরোপ করা হয়েছিল, তখন আমরা আশা করেছিলাম যে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আসবে না। কিন্তু এখন এই শুল্কের কারণে সুরাট, জাভেরি বাজার এবং কলকাতার কিছু এলাকায় কর্মরত প্রায় ১,৭৫,০০০ শ্রমিক প্রভাবিত হবেন।”
তবে, তিনি আশাবাদী যে ভারতের শিল্পপতিরা বিকল্প বাজারের দিকে মনোযোগ দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রত্ন ও জুয়েলারি শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের রফতানি হয়, যা শিল্পের মোট রপ্তানির প্রায় ৩০%।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (জিজেইপিসি) জানিয়েছে, এই শুল্কের ফলে রফতানি ৪০-৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সুরাট, যেখানে বিশ্বের ৯০% হীরা কাটা ও পালিশ করা হয়, এবং মুম্বইয়ের সিপজেড (SEEPZ) এলাকা, যেখান থেকে ৮৫% রপ্তানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়, এই শুল্কের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই শিল্পে প্রায় ১২ লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত, এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এই শুল্কের ফলে লক্ষাধিক শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সাইয়াম মেহরা জানিয়েছেন, শিল্পপতিরা ইতিমধ্যেই বিকল্প বাজারের দিকে নজর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা ভারতের সমস্ত রাজ্যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার এবং অন্যান্য বাজারে আমাদের বিপণন কার্যক্রম বাড়িয়েছি।”
এছাড়া, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মেহরা আশা প্রকাশ করেছেন, “আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমরা মার্কিন শুল্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিগগিরই সুবুদ্ধির জয় হবে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন।”
ভারতের রত্ন ও জুয়েলারি শিল্প ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীন থেকে চাহিদা হ্রাসের কারণে রফতানি ১৪.৫% কমে ৩২.৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এছাড়া, স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৩,২০০ ডলার এবং ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম ৯০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় চাহিদা আরও কমেছে।
নতুন শুল্কের ফলে কাটা ও পালিশ করা হীরার উপর শুল্ক শূন্য থেকে ২৭% এবং সোনার গহনার উপর ৫.৫-৭% থেকে ৩২-৩৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শুল্ক বৃদ্ধি ভারতীয় পণ্যের দাম মার্কিন বাজারে বাড়িয়ে দেবে, যা চাহিদা কমিয়ে দেবে।জিজেইপিসি চেয়ারম্যান কিরীট ভানসালি এই ঘটনাকে “রত্ন ও জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি কালো দিন” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “এই শুল্ক শিল্পের প্রতিটি স্তরে চাপ সৃষ্টি করবে, ছোট কারিগর থেকে বড় নির্মাতারা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” শিল্পপতিরা ভারত সরকারের কাছে তাৎক্ষণিক ত্রাণ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২৫-৫০% শুল্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ডিউটি ড্রব্যাক স্কিম, বাজার বৈচিত্র্যের জন্য আর্থিক সহায়তা, এবং SEZ ইউনিটগুলির জন্য উল্টো কাজের অনুমতি।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার, যার মূল্য ৮৫ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী দুই বছরে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, এই সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
জন আব্রাহামের হাতে ‘প্রেসিডেন্ট কাপ’ তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি
সম্প্রতি সমাপ্ত IIJS প্রিমিয়ার ২০২৫ জুয়েলারি মেলায় ৭০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা দেখা গেছে, যা শিল্পের স্থিতিস্থাপকতা প্রকাশ করে। এছাড়া, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আসন্ন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা শিল্পের জন্য স্বস্তি আনতে পারে।