সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সোনা ও রুপোর দামে বড় ধরনের উত্থান বাজারে উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে। তবে এই র্যালি মিস করলেও বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ফিন্যান্সিয়াল এডুকেটর নীতিন কৌশিক। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদি লাভের পেছনে ছুটে নয়, ধৈর্য ও নিয়মিত বিনিয়োগের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদে আসল সম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব।
কৌশিক লিখেছেন, “সোনা-রুপোর দামে হঠাৎ লাফে সবাই উত্তেজিত। কিন্তু যদি কেউ এই র্যালিতে ঢুকতে না পারে, তাতেও কিছু যায় আসে না। দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ গঠনের মূল দর্শন আপনি এখনও হারাননি।”
দীর্ঘ চক্রে চলে সোনা-রুপো:
উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, মাত্র কয়েক মাসে সোনার দাম ১০ গ্রাম প্রতি প্রায় ৬৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১,১০,০০০ টাকারও ওপরে উঠে গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো বিনিয়োগকারীর ৮০ লাখ টাকার পোর্টফোলিওতে যদি ৭.৫% বরাদ্দ সোনায় থাকে (প্রায় ৬ লাখ), তবে কাগুজে লাভ দাঁড়ায় আনুমানিক ৩.৭ লাখ টাকা। কৌশিকের মতে, এই আয় আকর্ষণীয় হলেও তা জীবন-পরিবর্তনকারী নয়। বরং সোনা-রুপো দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে সম্পদ বৃদ্ধি করে—এটাই তাদের আসল শক্তি।
নিয়মিত বিনিয়োগই মূল চাবিকাঠি: Gold Silver Investment Strategy
তিনি পরামর্শ দেন মাসিক ভিত্তিতে নিয়মিত বিনিয়োগ (SIP)—যেমন সোনা, রুপো, গোল্ড ETF বা সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিনিয়োগে প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা করে দীর্ঘমেয়াদে (৫–১০ বছর)। বাজার বাড়লেও লাভ, কমলেও সুযোগ—দুই দিকই ধরতে পারেন বিনিয়োগকারী। এতে বাজারের ওঠানামা নিয়ে অযথা মানসিক চাপও কমে।
কর সাশ্রয়ের বিষয়েও স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৌশিক বলেন, সোনা ৩৬ মাসের বেশি সময় ধরে রাখলে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ কর (LTCG) প্রযোজ্য হয়, যার হার ২০%, সঙ্গে থাকে সূচকায়ন সুবিধা। অন্যদিকে সোভরেন গোল্ড বন্ড (SGB) পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ধরে রাখলে মূলধনী লাভে করই দিতে হয় না-উল্টো সুদ পাওয়া যায়। তবে ফিজিক্যাল গোল্ডে মেকিং চার্জ ও GST থাকায় নিট রিটার্ন কমে যেতে পারে।
বর্তমান দাম ও দৃষ্টিভঙ্গি:
অক্টোবর ২০২৫ অনুযায়ী, ২৪ ক্যারেট সোনা ১০ গ্রামে প্রায় ১,৩০,০০০ টাকা এবং রুপোর দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১,৯০,০০০ টাকা—বর্ষওয়ারি প্রায় ৬০% বৃদ্ধি। কৌশিকের মতে, স্বল্পমেয়াদে ওঠানামা থাকলেও সোনা-রুপো দীর্ঘমেয়াদি ভারসাম্যপূর্ণ পোর্টফোলিওর নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবেই থাকবে।
তিনি লেখেন, “র্যালিতে থাকলে শুভেচ্ছা। না থাকলেও আতঙ্ক নয়। মূল্যবান ধাতু শেষ পর্যন্ত পুরস্কৃত করে সেই বিনিয়োগকারীকে, যে নিয়মিত, ধৈর্যশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি পথে অটল থাকে।”


