বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় সোনার দাম বাড়ছে, কলকাতায় কত হল জানুন

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণভোক্তা দেশ, যেখানে চীনের পরেই অবস্থান, সোনার (Gold Prices) প্রায় পুরো চাহিদাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে। দেশীয় বাজারে পুনর্ব্যবহৃত (recycled) সোনার…

Gold Prices Surge in Kolkata

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণভোক্তা দেশ, যেখানে চীনের পরেই অবস্থান, সোনার (Gold Prices) প্রায় পুরো চাহিদাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে। দেশীয় বাজারে পুনর্ব্যবহৃত (recycled) সোনার অবদান এখনও সীমিত। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার এবং দেশীয় অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রভাব সরাসরি ভারতীয় সোনার দামের ওপর পড়ে।

Advertisements

বর্তমানে দেশে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী। দিল্লিতে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রাম ₹৯,২৮১ এবং ২৪ ক্যারেট (৯৯৯ বিশুদ্ধতা) সোনার দাম প্রতি গ্রাম ₹১০,১২২। অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতেও সোনার দাম প্রায় একই রকম, যদিও কিছুটা তারতম্য রয়েছে স্থানীয় কর কাঠামো ও পরিবহন ব্যয়ের কারণে।

   

ভারতের ১০টি প্রধান শহরে আজকের সোনার দর:

  • দিল্লি:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২৮১/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১২২/গ্রাম
  • চেন্নাই:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • বেঙ্গালুরু:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • মুম্বই:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • পুনে:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • কলকাতা:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • অহমেদাবাদ:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২৭১/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,০৯৮/গ্রাম
  • হায়দরাবাদ:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২২৬/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১০৯/গ্রাম
  • ইন্দোর:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২৭১/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১১২/গ্রাম
  • লখনউ:
    ২২ ক্যারেট – ₹৯,২৮১/গ্রাম
    ২৪ ক্যারেট – ₹১০,১১২/গ্রাম

সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি: কারণসমূহ:
বিশ্ববাজারে সোনার দাম ডলারে নির্ধারিত হয়, ফলে ভারতীয় রুপির বিনিময় হারে হেরফের হলে তার প্রভাব সরাসরি দেশের সোনার দামে পড়ে। সম্প্রতি রুপির মান কিছুটা দুর্বল হয়েছে ডলারের তুলনায়, যার ফলে আমদানিকৃত সোনার খরচ বেড়েছে।

এছাড়াও, সোনার ওপর ভারতের আমদানি শুল্ক এবং জিএসটি মিলিয়ে প্রায় ১৮% পর্যন্ত কর চাপ রয়েছে। এ ধরনের কর কাঠামো ভারতীয় বাজারে সোনার দামকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

অপরদিকে, বৈশ্বিক বাজারে মুদ্রাস্ফীতি এবং মার্কিন বন্ডের ইল্ডে ওঠানামা সোনার দামের দিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন বন্ডের ইল্ড কমে যায় বা বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকেন, ফলে চাহিদা বাড়ে এবং দামও চড়ে যায়।

কেন বিনিয়োগকারীরা এখনও সোনাকেই বেছে নিচ্ছেন?
সোনা ঐতিহ্যগতভাবে এক ‘হেজ অ্যাগেইনস্ট ইনফ্লেশন’ অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে নিরাপদ অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবং শেয়ারবাজারের ঝুঁকি এড়াতে বহু বিনিয়োগকারী আবার সোনার দিকে ঝুঁকছেন।

বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং ঊর্ধ্ববিত্ত পরিবারগুলির মধ্যে সোনা কেনার প্রবণতা এখনো যথেষ্ট দৃঢ়। বিয়ে, উৎসব ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার গহনা কেনা শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ হিসেবেও বিবেচিত হয়।

আগামী দিনে সোনার বাজার:
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের বিপরীতে রুপির অবস্থা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হারের সিদ্ধান্ত—এই তিনটি বিষয় সোনার ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা নেবে।

তবে দামের উর্ধ্বগতি সত্ত্বেও, যেহেতু সোনা দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ হিসেবে নিরাপদ এবং উচ্চ লিকুইডিটির অধিকারী, তাই আগামী দিনেও এটি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় থেকে যাবে।

সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও সোনা এখনো দেশের নাগরিকদের কাছে এক নির্ভরযোগ্য ও ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগ মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল গোল্ড, গোল্ড ইটিএফ ও সোনার সেভিংস স্কিমের মতো বিকল্প মাধ্যমের প্রসার ঘটলেও, সোনার প্রকৃত চাহিদা ভারতীয়দের মনে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের চাহিদা বাড়বে এবং সেই সঙ্গে দামেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের উচিত পরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে সোনা কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া।