গত সপ্তাহে সোনার মূল্য (Gold price) একটানা ষষ্ঠ সপ্তাহের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২ শতাংশের বেশি বেড়ে ২,৮৭৩.৬৩ ডলারে পৌঁছেছে প্রতি আউন্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর এটি ঘটেছে, এবং এর ফলে সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি বর্ধিত রাজনৈতিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে সাধারণত বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব:
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে চীনের উপর শুল্ক আরোপ করতে শুরু করেছেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের সোনা এবং অন্যান্য নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য করেছে। একদিকে, ট্রাম্প মেক্সিকো এবং কানাডাকে এক মাসের জন্য শুল্ক থেকে রেহাই দিয়েছেন, অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের অব্যাহত উত্তেজনায় সোনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোনা, যা রাজনৈতিক এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার সময়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, গত বুধবার ২,৮৮২.১৬ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছায়, যা এক নতুন সর্বোচ্চ মূল্য। এই বৃদ্ধি সোনাকে একটি বিশ্বস্ত আশ্রয় হিসেবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। সোনার এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপগুলি দায়ী।
সোনাের ভবিষ্যত মূল্যবৃদ্ধি:
বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যাংক সিটি ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে, সোনা ভবিষ্যতেও এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রাখবে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৩,০০০ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছাতে পারে। সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সোনার মূল্য বৃদ্ধির কারণ শুধু বাণিজ্যিক উত্তেজনা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে এটি হতে পারে। তাদের মতে, পৃথিবীজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আর্থিক নীতির পরিবর্তনও সোনা এবং অন্যান্য সুরক্ষিত সম্পদের চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়া, চীন তার কিছু বীমা তহবিলকে সোনা কেনার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদী এবং মধ্যমেয়াদী সম্পদ বরাদ্দে সোনা ব্যবহার করতে পারে। এই পদক্ষেপটি সোনা বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে এবং বৈশ্বিক সোনার চাহিদা আরও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
সিলভার প্রাইসও বৃদ্ধি পেয়েছে:
এদিকে, সিলভার বা রূপার দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে রূপার দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৩২.৪১ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। এটি সোনার সাথে সম্পর্কিত এবং অনেক বিনিয়োগকারী রূপাকে সোনার নিরাপদ বিনিয়োগের পাশাপাশি একটি বিকল্প হিসাবে গ্রহণ করছে।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক অবস্থা এবং সোনার প্রতি আকর্ষণ:
বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং অন্যান্য বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সোনার চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। সোনা একটি দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে পরিচিত এবং এটি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকতে চান।
সোনার মূল্য শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে বাড়েনি, বরং এটি মূলত বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিস্থিতি এবং অন্যান্য দেশগুলির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আর্থিক নীতির কারণে এটি চলছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে আগামী বছরগুলিতে সোনার মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে, কারণ সরকারের আর্থিক নীতির কারণে নিরাপদ সম্পদের চাহিদা বাড়তে থাকবে।
সোনা ও রূপার মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী আর্থিক এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত, চীন এবং অন্যান্য দেশগুলির সোনা কেনার সিদ্ধান্তগুলি সোনার বাজারে আরও সক্রিয়তা আনবে এবং মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে, এবং এটির মূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে আগামী বছরগুলিতে।
বিশ্বের আর্থিক প্রবণতা এবং বাণিজ্যিক উত্তেজনার উপর নজর রাখলে, সোনা একটি শক্তিশালী এবং নিরাপদ সম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে, যা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে।