স্থানীয় জুয়েলারি ব্যবসায়ী এবং খুচরা বিক্রেতাদের তীব্র চাহিদার কারণে শুক্রবার জাতীয় রাজধানীতে সোনার দাম (Gold price) ৬,২৫০ টাকা বেড়ে ৯৬,৪৫০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছে রেকর্ড গড়েছে। অল ইন্ডিয়া সারাফা অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছানো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার চাহিদা বৃদ্ধি দেশীয় বাজারে এই দাম বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ।
বুধবার ৯৯.৯ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দাম ছিল ৯০,২০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। এছাড়া, ৯৯.৫ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দামও ৬,২৫০ টাকা বেড়ে ৯৬,০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী বন্ধের দাম ৮৯,৭৫০ টাকার তুলনায় নতুন উচ্চতা। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশের বুলিয়ন বাজার বন্ধ ছিল।
রুপোর দামেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। শুক্রবার রুপোর দাম ২,৩০০ টাকা বেড়ে ৯৫,৫০০ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বন্ধের দাম ৯৩,২০০ টাকার তুলনায় বড় লাফ। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে রুপোর দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এই বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) জুন মাসের জন্য সোনার ফিউচার দাম ১,৭০৩ টাকা বেড়ে ৯৩,৭৩৬ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছেছে, যা এটির আরেকটি সর্বকালের উচ্চতা। এলকেপি সিকিউরিটিজের কমোডিটি অ্যান্ড কারেন্সি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ অ্যানালিস্ট জতিন ত্রিবেদী বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ তীব্রতর হওয়ায় রুপির শক্তি সত্ত্বেও সোনার দাম এমসিএক্স-এ ৯৩,৫০০ টাকার কাছাকাছি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ডের দাম নতুন শিখরে পৌঁছে ৩,২৩৭.৩৯ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে। পরে এটি কিছুটা কমে ৩,২২২.০৪ মার্কিন ডলারে স্থিতিশীল হয়। এশিয়ার বাজারে কমেক্স গোল্ড ফিউচার দামও রেকর্ড গড়ে ৩,২৪৯.১৬ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। কোটাক সিকিউরিটিজের এভিপি-কমোডিটি রিসার্চ কায়নাত চেনওয়ালা বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়েছে, যা কমেক্স গোল্ডের দামকে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে।”
গত ২ এপ্রিল সোনার দাম ৩,২০০ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্স ছাড়িয়েছিল, কিন্তু পরে মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণে কিছুটা কমেছিল। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন চিনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করায় চিন পাল্টা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তীব্রতর হয়েছে। এর প্রভাবে মার্কিন ডলার ১০০-এর নিচে নেমে গেছে, যা সোনা ও রুপোর দামকে আরও সমর্থন দিয়েছে।
ইউবিএস-এর মতে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি, মন্দার আশঙ্কা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো চলমান সমস্যাগুলি সোনার আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বাণিজ্য যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকায়, দীর্ঘমেয়াদে সোনার দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। গত তিন বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি বার্ষিক ১,০০০ মেট্রিক টনের বেশি সোনা কিনে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। এই প্রবণতা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের মতো দেশে, যেখানে সোনা ঐতিহ্যগতভাবে বিনিয়োগ এবং গহনার জন্য জনপ্রিয়, এই দাম বৃদ্ধি চাহিদাকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে। তবে, বিবাহের মরশুম এবং উৎসবের সময়ে সোনার চাহিদা সাধারণত বেড়ে যায়, যা দামকে আরও সমর্থন দিতে পারে। সামগ্রিকভাবে, সোনা ও রুপোর দামের এই ঊর্ধ্বগতি বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার প্রতিফলন, এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।