গত কয়েক দিনে সোনা ও রুপোর দামে ধারাবাহিক পতন (Gold price) দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগে অনেক ক্রেতা ছুটে যাচ্ছেন জুয়েলারি দোকানে, কম দামে সোনা কেনার আশায়। কিন্তু আর্থিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এই তাড়াহুড়োয় অনেকেই এমন কিছু ফাঁদে পড়ছেন, যা পরবর্তীতে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সাধারণত সোনা ও রুপোকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে ‘ফিজিক্যাল গোল্ড’ বা বাস্তব সোনা কেনাবেচার ক্ষেত্রে রয়েছে একাধিক অজানা ঝুঁকি। সম্প্রতি দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর কিছুটা কমেছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই দাম আবারও বাড়তে পারে। তবু আর্থিক বিশেষজ্ঞ সৌম্য কৌশিকের বক্তব্য, এই মুহূর্তে ফিজিক্যাল গোল্ড কেনা সবসময় লাভজনক নয়।
‘স্প্রেড ট্র্যাপ’ কী?
সাধারণ ক্রেতারা বেশিরভাগ সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করেন — সেটি হল বাই-সেল স্প্রেড, অর্থাৎ ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে পার্থক্য। দোকান থেকে সোনা কিনলে তার সঙ্গে ডিলারের মার্জিন, জিএসটি এবং মেকিং চার্জ যুক্ত হয়। ফলে ক্রেতা যে দামে সোনা কিনছেন, সেটি বাজারমূল্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি ১.২২ লক্ষ টাকা প্রতি কিলো দরে সোনা কেনেন, বিক্রির সময় তিনি হয়তো মাত্র ১.১৮ লক্ষ টাকাই পাবেন — এমনকি বাজারদর অপরিবর্তিত থাকলেও। অর্থাৎ প্রতি কিলোয় ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে শুধুমাত্র ‘স্প্রেড’-এর কারণে।
সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা খরচ:
ফিজিক্যাল সোনা কিনলে সেটি নিরাপদে রাখার দায়িত্বও ক্রেতার। ১০ কিলো সোনা রাখার জন্য ব্যাংক লকার ভাড়া ও বীমা খরচ বছরে মোটা অঙ্কে পৌঁছায়। এই বাড়তি ব্যয় প্রায়ই বিনিয়োগের প্রকৃত লাভ কমিয়ে দেয়।
বিশুদ্ধতার প্রশ্নে ফাঁদ:
কৌশিকের মতে, হ্যালমার্কযুক্ত সোনা সব সময় ১০০% বিশুদ্ধ হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই জুয়েলারি দোকানে মেকিং চার্জ ও অশুদ্ধতার কারণে পুনরায় বিক্রির সময় দাম কমে যায়। অপরিচিত বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা সোনা পরে পরীক্ষা করাতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হন।
বিকল্প হিসাবে ডিজিটাল বিনিয়োগ:
এই সমস্যাগুলি এড়াতে কৌশিকের পরামর্শ—গোল্ড ও সিলভার ইটিএফ বা ডিজিটাল গোল্ডে বিনিয়োগ করুন। এগুলি সেবি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থা বা অনুমোদিত ভল্টে সুরক্ষিত থাকে, ফলে বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি, পুনর্বিক্রয়ের সময় কোনও পরীক্ষা বা গুণমান নিয়ে বিতর্কের সম্ভাবনাও থাকে না। তিনি বলেন, “ডিজিটাল গোল্ড স্বচ্ছ, বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ — যা ফিজিক্যাল গোল্ড সবসময় দিতে পারে না।”


