বিয়ের মরশুম যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন মধ্যবিত্তের হাতে সোনার গয়না কেনা এক অলীক স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বুধবার ফের একবার বড়সড় চমক দিল সোনার বাজার। একটানা কয়েকদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রেখেই আজ আবার খাঁটি ২৪ ক্যারাট সোনার দাম এক লক্ষ টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, ২২ ক্যারাট সোনার দামও পৌঁছে গিয়েছে ৯৩ হাজার টাকার উপরে। এই পরিস্থিতিতে বিয়ে কিংবা পূজোর আগে গয়না কেনার পরিকল্পনা অনেকেরই থমকে যেতে বসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা ও ডলারের দামের ওঠানামা এর অন্যতম কারণ। চলতি সপ্তাহেই আমেরিকায় ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক এবং সুদের হার সংক্রান্ত সম্ভাব্য পরিবর্তনের জল্পনাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে দামের উপর।
কতটা বেড়েছে দাম?
বুধবার কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট খাঁটি সোনার দাম ছিল প্রায় ₹১,০০,৮৭০। অন্যদিকে, ২২ ক্যারাট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ₹৯৩,২৫০ প্রতি ১০ গ্রামে। শুধু কলকাতা নয়, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দরাবাদ সহ অন্যান্য শহরগুলিতেও একইভাবে বেড়েছে সোনার দাম। গত এক মাসেই সোনার দাম প্রায় ₹৪,০০০-₹৫,০০০ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বিয়ের মরশুমে সংকটে সাধারণ মানুষ
এখন চলছে শিবরাত্রি থেকে শুরু করে জন্মাষ্টমী পর্যন্ত একের পর এক শুভ লগ্নের মরশুম। বহু পরিবার এই সময়টাকেই বেছে নেন বিয়ে কিংবা গয়না কেনার জন্য। তবে এখনকার এই ঊর্ধ্বমুখী সোনার দাম সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত, তাঁদের পক্ষে এখন সোনার গয়না কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ীরাও চিন্তিত
সোনার বাজারে এই লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তায়। তাঁদের মতে, গত এক সপ্তাহে গয়নার বিক্রি প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অনেকেই দোকানে এসে খোঁজখবর নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার পুরনো সোনা বিক্রি করে নতুন কিছু কেনার চেষ্টা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে কিস্তিতে কেনার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আগামী মাসগুলিতে যদি আন্তর্জাতিক অস্থিরতা না কমে, তবে সোনার দামে আরও ঊর্ধ্বগতি দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দুর্গাপুজো, ধনতেরস ও দীপাবলির মতো উৎসব থাকায় সোনার চাহিদা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে দাম যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যদি ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার না বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে সাময়িকভাবে সোনার দামে স্থিতিশীলতা আসতে পারে। কিন্তু তাতে কতটা স্বস্তি মিলবে মধ্যবিত্তের? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।