ভারতে সোনার দামে (Gold Price) বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) টানা দ্বিতীয়বার রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পর সোনার দামে এই বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে গত কয়েকদিনে সোনার দাম চার সপ্তাহের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। আমেরিকা ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার ভয় বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) সোনার দাম একদিনে ১০ গ্রামে ২,০১৪ টাকা বেড়েছে এবং ৯০,০০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বর্তমানে সোনার দাম তার সর্বকালীন সর্বোচ্চ মূল্য ৯১,৪২৩ টাকা থেকে মাত্র ১,৭৬১ টাকা দূরে রয়েছে।
MCX-এ সোনার দামের গতিবিধি
বুধবার দুপুর পর্যন্ত MCX-এ সোনার দাম ১০ গ্রামে ৮৯,৪০২ টাকায় লেনদেন হচ্ছিল, যা ১,৭৫৪ টাকা বা ২% বৃদ্ধি পেয়েছে। জুন ২০২৫ মেয়াদি এই সোনা দিনের শুরুতে ২,০১৪ টাকা বেড়ে ৮৯,৬৬২ টাকার উচ্চস্তরে পৌঁছেছিল। এছাড়া, মে ২০২৫ মেয়াদি সোনার দাম ৮৯,১২৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে, যা ১,৬৭৪ টাকা বা ১.৯১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মেয়াদের সর্বোচ্চ দিনের দাম ছিল ৮৯,২৯৫ টাকা, যা তার সর্বকালীন শীর্ষ ৯০,৯৩৭ টাকার কাছাকাছি।
ভারতে খুচরো বাজারে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৭১০ টাকা বেড়ে ৯০,৪১০ টাকা, ২২ ক্যারেট ৬৫০ টাকা বেড়ে ৮২,৯০০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৫৩০ টাকা বেড়ে ৬৭,৮৩০ টাকায় পৌঁছেছে। এই লাফ সোনার দামে এপ্রিল মাসে ২.৬% হ্রাসকে সংকুচিত করেছে।
কেন বাড়ছে সোনার দাম?
সোনার দামে এই ঊর্ধ্বগতির পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, RBI-এর রেপো রেট কমানোর ফলে ভারতীয় মুদ্রার দুর্বলতা বেড়েছে, যা সোনার দামকে সমর্থন দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ১০৪% শুল্ক আরোপ করেছেন, যার জবাবে চীন “শেষ পর্যন্ত লড়াই” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী মন্দার ভয় তৈরি করেছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন।
ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, স্পট গোল্ডের দাম বুধবার ২% বেড়ে প্রায় ৩,০৪০ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। এছাড়া, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, প্রথম ত্রৈমাসিকে গোল্ড-ব্যাকড ETF-তে ২২৬.৫ মেট্রিক টন বা ২১.১ বিলিয়ন ডলারের প্রবাহ দেখা গেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে, ট্রাম্প ফার্মাসিউটিক্যাল আমদানির উপর “বড়” শুল্ক ঘোষণার কথা বলেছেন, যা বাজারে আরও অনিশ্চয়তা যোগ করেছে।
গত ১০ দিনের প্রবণতা
গত পাঁচ দিনের পতনের কারণে এপ্রিলে সোনার দাম ৩.৪% কমেছে। ৮ এপ্রিল ২৪ ক্যারেট সোনা ৬৫০ টাকা, ৭ এপ্রিল ২৮০ টাকা কমেছে। ৬ এপ্রিল দাম অপরিবর্তিত ছিল। গত সপ্তাহে সোনার দাম ২০২৫-এর সবচেয়ে বড় একদিনের পতন দেখেছে—৪ এপ্রিল ১,৭৪০ টাকা এবং ৫ এপ্রিল ৯৮০ টাকা কমে। এর আগে, মার্চে ৬.১১% বৃদ্ধির পর, ৩১ মার্চে ৭১০ টাকা, ১ এপ্রিলে ৯৩০ টাকা এবং ৩ এপ্রিলে ৫৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২ এপ্রিল ও ৩০ মার্চে দাম স্থিতিশীল ছিল।
বাজার বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ
মেহতা ইকুইটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমোডিটিজ) রাহুল কালান্ত্রি জানিয়েছেন, সোনা ও রুপোর দামে তীব্র অস্থিরতা দেখা গেছে। চীনের উপর ১০৪% শুল্ক এবং আমেরিকার ১০% বেসলাইন শুল্ক নীতি বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “এই অপ্রত্যাশিত নীতিগত পরিবর্তন বাজারে তীব্র প্রভাব ফেলেছে, যদিও সোনার প্রাথমিক শক্তি সীমিত হয়েছে।”
কালান্ত্রির মতে, সোনার সমর্থন রয়েছে ২,৯৭৮-২,৯৫৫ ডলারে এবং প্রতিরোধ ৩,০৪০-৩,০৬৫ ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় সমর্থন ৮৭,২৬০-৮৬,৭৫০ টাকা এবং প্রতিরোধ ৮৭,৯১০-৮৮,৩৯০ টাকায়। বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের মার্চের নীতি সভার বিবরণের অপেক্ষায় রয়েছেন, যা সোনার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সোনার এই দাম বৃদ্ধি ভারতীয় বাজারে উৎসাহ ফিরিয়ে এনেছে। তবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।