মার্কিন সুদের হারের আশঙ্কায় সোনার রেকর্ড র‍্যালি

বুধবার সোনার দামে ফের নতুন রেকর্ড গড়ল ভারতীয় বাজার। দেশীয় বুলিয়ন রেট অনুযায়ী, ২৪ ক্যারেট সোনার ১০ গ্রাম দামের গড় দাঁড়িয়েছে ১,০৯,৪৪০ টাকা। যদিও দিনের…

gold price record high

বুধবার সোনার দামে ফের নতুন রেকর্ড গড়ল ভারতীয় বাজার। দেশীয় বুলিয়ন রেট অনুযায়ী, ২৪ ক্যারেট সোনার ১০ গ্রাম দামের গড় দাঁড়িয়েছে ১,০৯,৪৪০ টাকা। যদিও দিনের শুরুতে কিছুটা মুনাফা তোলার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, তবে এক লক্ষ টাকার উপরে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে হলুদ ধাতুটি।

ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (IBJA)-এর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সোনার দাম আগের দিনের তুলনায় ৬৬ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১,০৯,৪০৯ টাকায়। মঙ্গলবার সোনার দাম ছিল ১,০৯,৪৭৫ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। অপরদিকে রুপোর দামও ৬২৬ টাকা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ১,২৪,১৪৪ টাকায়, যা আগের সেশনে ছিল ১,২৪,৭৭০ টাকা।

   

বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলেন

মাল্টি-কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) সকালে সোনার ফিউচার্স দামে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছিল। উচ্চ স্তরে পৌঁছনোর পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলতে শুরু করেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের ইতিবাচক ইঙ্গিত এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোনার দাম নিম্নমুখী হলেও বড় পতন ঘটেনি।

বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সোনার এই র‍্যালির মূল চালক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল অর্থনৈতিক সংকেত। সাম্প্রতিক কর্মসংস্থান ও পেরোল ডেটা আশানুরূপ না আসায় বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন যে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর পথে হাঁটতে পারে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার প্রতি চাহিদা আরও বেড়েছে।

এলকেপি সিকিউরিটিজের রিসার্চ অ্যানালিস্ট জতীন ত্রিবেদী বলেন, “কমেক্সে সোনার দাম ০.৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৫৪ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে। এমসিএক্সে দাম বেড়েছে ০.৬৯ শতাংশ, পৌঁছেছে ১,০৯,২৫০ টাকায়। দুর্বল কর্মসংস্থান তথ্যের জেরে আসন্ন ফেড রেট কাট বাজারে প্রায় নিশ্চিত হিসাবে ধরা হচ্ছে। তবে সোনার দাম ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ক্রয় অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। ফলে মুনাফা তোলার প্রবণতা থাকতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে এবং ট্রেলিং স্টপ লস রাখা উচিত।”

CPI রিপোর্ট gold price record high

তিনি আরও জানান, আগামী দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI) রিপোর্ট বাজারের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে ভারতীয় বাজারে সোনার মূল সাপোর্ট ১,০৮,০০০ টাকার স্তরে এবং রেজিস্ট্যান্স ১,১০,০০০ টাকার কাছাকাছি রয়েছে।

কোটাক সিকিউরিটিজের এভিপি কমোডিটি রিসার্চ কায়নাত চৈনওয়ালা জানান, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল। “সোমবার স্পট গোল্ডের দাম ৩৬৪৬ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছে যায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজার দুর্বল হওয়ায় ট্রেডাররা ধারণা করছেন, চলতি বছর ফেডারেল রিজার্ভ অন্তত তিনবার সুদের হার কমাতে পারে। সেপ্টেম্বরে আসন্ন বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনাও বেশ জোরালো।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত সোনা কেনাও এই উত্থানকে বাড়তি জোর দিয়েছে। “আজও সোনার দাম সর্বকালের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক চাকরির ডেটা সংশোধনের প্রত্যাশা কাজ করছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আছেন, তাদের জন্য সোনা এখনও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবে স্বল্পমেয়াদি ট্রেডারদের জন্য ঝুঁকি রয়েছে, কারণ বাজার অতিরিক্ত ক্রয় অঞ্চলে অবস্থান করছে। স্বল্প মেয়াদে কিছুটা দাম কমলেও সামগ্রিকভাবে সোনার চাহিদা শক্তিশালী থাকবে।

অন্যদিকে, রুপোর দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করছে। শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ—দুটিই রুপোর দামে বড় প্রভাব ফেলছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার রেকর্ড ভাঙা উত্থান রুপোর গুরুত্বকে কিছুটা ছাপিয়ে গেছে।

নির্ভরযোগ্য সম্পদ সোনা

বুধবার সোনার বাজার প্রমাণ করেছে যে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক চাপের সময় বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি এখনও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ। দেশীয় বাজারে অল্প ওঠানামা থাকলেও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সোনার উত্থান চলমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “সোনার জন্য ১,১০,০০০ টাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই বাধা ভেঙে গেলে নতুন উচ্চতা তৈরি হতে পারে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের নজর রয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের নতুন ডেটার দিকে। সেই তথ্যই আগামী দিনে সোনার দামের পথ নির্ধারণ করবে।

Business: Gold prices hit a new record in India, with 24-carat gold at ₹1,09,440 per 10 grams. Weak US economic data and expectations of a Fed rate cut are driving the rally, though experts caution investors about potential profit booking.