সোনার দাম রেকর্ড ছুঁয়ে পৌঁছাল ৯৮,১০০ টাকায়

বিশ্বব্যাপী নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতি ঝোঁক বাড়ার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ (US-China trade war) তীব্রতর হওয়ায় ভারতের রাজধানীতে সোনার দাম (Gold price)…

Gold price Hits Record

বিশ্বব্যাপী নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতি ঝোঁক বাড়ার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ (US-China trade war) তীব্রতর হওয়ায় ভারতের রাজধানীতে সোনার দাম (Gold price) বুধবার ১,৬৫০ টাকা বেড়ে নতুন রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। অল ইন্ডিয়া সরাফা অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ৯৯.৯ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনা প্রতি ১০ গ্রামে ৯৮,১০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা মঙ্গলবারের তুলনায় ৯৬,৪৫০ টাকা থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এছাড়াও, ৯৯.৫ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দাম ১,৬৫০ টাকা বেড়ে ৯৭,৬৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী দিনের ৯৬,০০০ টাকার তুলনায় একটি নতুন শিখর।

Advertisements

অন্যদিকে, রুপোর দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রতি কিলোগ্রামে ১,৯০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে রুপোর দাম ৯৯,৪০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা মঙ্গলবার ছিল ৯৭,৫০০ টাকা। বিশ্ববাজারে স্পট গোল্ড ৩,৩১৮ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যদিও পরে কিছুটা কমে ৩,২৯৯.৯৯ ডলারে স্থিতিশীল হয়েছে। স্পট সিলভার এশিয়ার বাজারে প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ৩২.৮৬ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্সে লেনদেন হয়েছে।

   

বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এবং নিরাপদ বিনিয়োগের ঝোঁক

কোটাক সিকিউরিটিজের এভিপি-কমোডিটি রিসার্চ কায়নাত চৈনওয়ালা জানিয়েছেন, “মার্কিন সরকার চীনের উপর রপ্তানি নিয়ম আরও কঠোর করায় বাণিজ্য যুদ্ধের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সোনার দামকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উপর শুল্ক আরোপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তদন্তের ঘোষণা করেছেন, যা বাজারে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। বুধবার মার্কিন প্রশাসন চীন থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

আবানস ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চিন্তন মেহতার মতে, সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতির পিছনে মার্কিন ডলার সূচকের পতনও একটি বড় কারণ। তিনি জানান, ডলার সূচক তিন বছরের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে, যা সোনার দাম বাড়ার জন্য সহায়ক হয়েছে। এছাড়াও, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। মেহতা আরও বলেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমর্থন এবং শুল্ক-চালিত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সোনার জন্য শক্তিশালী সমর্থন প্রদান করছে।”

সোনা ও রুপোর বাজারে ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সোনা ও রুপোর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। মেহতা জানিয়েছেন, গোল্ড-ব্যাকড ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড)-এ ক্রমাগত বিনিয়োগ প্রবাহ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির ক্রয় অব্যাহত থাকায় সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও, বিশ্বের প্রধান ব্যাঙ্কগুলি সোনার দামের উপর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াচ্ছে।

রুপোর ক্ষেত্রেও একই রকম প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্প ক্ষেত্রে রুপোর চাহিদা, বিশেষ করে সৌর প্যানেল এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদনে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বাড়ছে। এছাড়াও, বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে রুপোর প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন। বিশ্ববাজারে রুপোর দাম বৃদ্ধি ভারতীয় বাজারেও প্রতিফলিত হচ্ছে, যেখানে রুপোর দাম প্রায় ১ লক্ষ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে পৌঁছতে চলেছে।

Advertisements

ভারতীয় বাজারে সোনা ও রুপোর গুরুত্ব

ভারতীয় সংস্কৃতিতে সোনা ও রুপোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এগুলি কেবল বিনিয়োগের মাধ্যম নয়, বিয়ে, উৎসব এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এগুলির ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে, সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধির ফলে গহনার চাহিদা কিছুটা কমতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। উচ্চ দামের কারণে ভোক্তারা গহনা ক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন, তবে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনা ও রুপোর চাহিদা বাড়তে থাকবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনা ও রুপোর দাম আরও বাড়তে পারে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং ডলারের দুর্বলতা সোনার দামকে আরও উপরে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, চীন এবং অন্যান্য দেশের প্রতিশোধমূলক শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি করছে, যা সোনা ও রুপোর মতো নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বাড়াচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা বাজারের প্রবণতা এবং অর্থনৈতিক তথ্যের উপর নজর রাখুন। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তৃতা এবং আসন্ন মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য সোনা ও রুপোর দামের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সোনা ও রুপো নিরাপদ বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতীয় বাজারে সোনার দাম ৯৮,১০০ টাকা এবং রুপোর দাম ৯৯,৪০০ টাকায় পৌঁছানো বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময় হতে পারে, তবে বাজারের অস্থিরতার কারণে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি