৭ দিনে ৫.৭৫% কমল সোনার দাম, জানুন কারণ

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছে ১০ গ্রামে ১,০০,০০০ টাকার অবিশ্বাস্য সীমা অতিক্রম করার পর, হলুদ ধাতুটির দাম (Gold price) গত কয়েক দিন ধরে…

Gold price decline

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছে ১০ গ্রামে ১,০০,০০০ টাকার অবিশ্বাস্য সীমা অতিক্রম করার পর, হলুদ ধাতুটির দাম (Gold price) গত কয়েক দিন ধরে ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইবিজেএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২২ এপ্রিল সোনার দাম ছিল ৯৯,১০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম, যা ২ মে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৩,৩৯৩ টাকায়। মাত্র সাতটি ট্রেডিং সেশনে এটি ৫.৭৫% হ্রাস পেয়েছে। গত পাঁচ দিনে ৯৯৯ সোনার (৯৯.৯% বিশুদ্ধ) দাম ছিল: ৯৩,৩৯৩ টাকা (২ মে), ৯৫,৬৮৯ টাকা (৩০ এপ্রিল), ৯৬,২৮৬ টাকা (২৯ এপ্রিল), ৯৫,৪২০ টাকা (২৮ এপ্রিল) এবং ৯৫,৬৬৯ টাকা (২৫ এপ্রিল)। একই সময়ে ৯৯৫ সোনার (৯৯.৫% বিশুদ্ধ) দাম ছিল: ৯৩,০১৯ টাকা (২ মে), ৯৫,৩০৬ টাকা (৩০ এপ্রিল), ৯৫,৯০০ টাকা (২৯ এপ্রিল), ৯৫,০৩৮ টাকা (২৮ এপ্রিল) এবং ৯৫,২৮৬ টাকা (২৫ এপ্রিল)।

সোনার বিশুদ্ধতা বোঝার তাৎপর্য
‘৯৯৯’ সোনা বলতে ৯৯.৯% বিশুদ্ধ সোনাকে বোঝায়, যেখানে মাত্র ০.১% অন্য ধাতু মেশানো থাকে। এটি প্রায় ২৪ ক্যারাট সোনার সমতুল্য, যা সোনার সবচেয়ে বিশুদ্ধ রূপ। অন্যদিকে, ‘৯৯৫’ সোনা ৯৯.৫% বিশুদ্ধ, অর্থাৎ ০.৫% অন্য ধাতু মেশানো থাকে। এটি সাধারণত কয়েন এবং বারের মতো বিনিয়োগ-গ্রেড সোনার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ৯৯৯ সোনার তুলনায় সামান্য কম বিশুদ্ধ।

   

সোনার দাম কমার কারণ
সোনার দাম সংকটের উপর নির্ভরশীল। সংকট এবং উত্তেজনার সময়ে সোনার দাম সাধারণত বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিন পর, ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ছিল প্রায় ৭৯,৩৬০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি সংক্রান্ত উত্তেজনা এবং মার্কিন ডলারের দুর্বলতার কারণে সোনার দাম নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে।

Also Read | আর ব্র্যান্ড নয়! সস্তা জেনেরিক ওষুধ লেখার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

সম্প্রতি, ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে সরকার অটোমোবাইল এবং অটো পার্টসের উপর ২৫% শুল্ক শিথিল করবে। এছাড়া, মার্কিন ডলারও শক্তিশালী হয়েছে। প্রথম আদেশটি অনিশ্চয়তা কিছুটা কমিয়েছে, এবং ডলারের শক্তিশালীকরণ সোনার দাম কমাতে সাহায্য করেছে। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সোনার দাম ১,০০,০০০ টাকা (৩% জিএসটি সহ) অতিক্রম করার পর কিছু মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে, যা দাম কমার অন্যতম কারণ।

তবে, যদি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত করতে মূল নীতি সুদের হার কমায়, তাহলে সোনার দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তিনটি বিষয়ের দিকে নজর রাখবেন: মার্কিন ফেডের সিদ্ধান্ত (যা মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্যের উপর নির্ভর করবে), মার্কিন ডলার সূচকের গতিবিধি এবং ট্রাম্পের শুল্ক সংক্রান্ত নীতি।

ভারতের আমদানি নির্ভরতা
ভারত সোনার জন্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল। ভারতে সোনার চাহিদা মূলত গহনার জন্য, তবে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়েন এবং বার কেনা হয়। ২০২৪ অর্থবছরে ভারত মোট ৪৮.৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনা আমদানি করেছে, যা ২০১৯ অর্থবছরে ৩৩.৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। সোনা সাধারণত ভারতের আমদানি বিলে অশোধিত তেলের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটেম। সরকার এই আমদানি কমাতে সার্বভৌম সোনা বন্ড (এসজিবি) এবং সোনার মুদ্রীকরণের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগও শারীরিক সোনার চাহিদা কমাতে সাহায্য করছে।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবক
সোনার দামের উপর বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ কারণগুলির গভীর প্রভাব রয়েছে। মার্কিন ডলারের শক্তি সোনার দামের সঙ্গে বিপরীত সম্পর্ক রাখে। ডলার শক্তিশালী হলে সোনা আমদানির খরচ কমে, ফলে দেশীয় বাজারে দাম কমে। এছাড়া, ভারতের উৎসব এবং বিয়ের মরসুমে সোনার চাহিদা বাড়ে, যা দাম বাড়াতে পারে। তবে, অর্থনৈতিক সংকোচন বা নিষ্পত্তিযোগ্য আয় কমে গেলে গহনার চাহিদা কমে, যা দাম হ্রাসের কারণ হতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সোনার দামের এই পতন স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হলেও, দীর্ঘমেয়াদী ক্রেতাদের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে। সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়। তবে, বিনিয়োগের আগে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতা, সুদের হারের সিদ্ধান্ত এবং মুদ্রাস্ফীতির তথ্য পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এছাড়া, সোনা কেনার সময় বিআইএস হলমার্ক সার্টিফিকেশন যাচাই করা এবং বিভিন্ন জুয়েলারির দোকানে দাম তুলনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সোনার দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে মার্কিন ফেডের নীতি, ডলারের শক্তি এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। যদি ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আরও শিথিল হয় বা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, তবে সোনার দাম আরও কমতে পারে। তবে, মুদ্রাস্ফীতি বা নতুন সংকট দেখা দিলে সোনার দাম আবারও বাড়তে পারে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে সোনার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে, এই ধাতুটি সবসময়ই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকবে।

সোনার দামের সাম্প্রতিক পতন মার্কিন ডলারের শক্তিশালীকরণ, শুল্ক নীতির শিথিলতা এবং মুনাফা তুলে নেওয়ার ফল। ভারতের সোনার বাজার আমদানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, বৈশ্বিক কারণগুলি দেশীয় দামের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সতর্কতার সময়, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই পতনকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব।