বুধের বাজারে রেকর্ড বৃদ্ধির পর সোনার দামে বড় পতন

সাত দিনের অবিরাম উত্থানের পর, যখন সোনার দাম (Gold price) রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তখন ভারতে আজ সোনার দামে উল্লেখযোগ্য সংশোধন হয়েছে, যা খুচরা ক্রেতাদের জন্য…

Gold Price Crashes in India Today After Record High; Silver Steady

সাত দিনের অবিরাম উত্থানের পর, যখন সোনার দাম (Gold price) রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তখন ভারতে আজ সোনার দামে উল্লেখযোগ্য সংশোধন হয়েছে, যা খুচরা ক্রেতাদের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে। ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০০ গ্রামে ৩০,০০০ টাকা (১০ গ্রামে ৩,০০০ টাকা) কমেছে। গত এক সপ্তাহে, ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০০ গ্রামে ৫৪,৭৭০ টাকা বেড়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী সংকেত এবং নিরাপদ আশ্রয় সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ঘটেছিল। আজকের এই দামের পতন সোনার ক্রেতাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যারা দাম কমার অপেক্ষায় ছিলেন। শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনের ফলে জুয়েলারি দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে এবং সোনায় বিনিয়োগের প্রতি মানুষের আগ্রহ পুনরায় বৃদ্ধি পাবে।

   

সোনার দামে তীব্র পতন

২৩ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে, বিশুদ্ধ এবং স্ট্যান্ডার্ড সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতা থেকে কমেছে। আজকের হিসাবে, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ২,৭৫০ টাকা কমে ৯০,১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৩,০০০ টাকা কমে ৯৮,৩৫০ টাকায় পৌঁছেছে। একইভাবে, ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ২,২৫০ টাকা কমে ৭৩,৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১০০ গ্রামের হিসাবে, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ২৭,৫০০ টাকা কমে ৯,০১,৫০০ টাকায় এবং ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৩০,০০০ টাকা কমে ৯,৮৩,৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই পতন সোনার বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সোনার দাম কমার কারণ

আজ সোনার দাম কমার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মার্কিন ডলার সূচকের পুনরুদ্ধার। খবরে প্রকাশ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। এই সিদ্ধান্ত মার্কিন ডলারকে তার তিন বছরের সর্বনিম্ন স্তর থেকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে, যা বিশ্বব্যাপী সোনার দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল অর্থনৈতিক তথ্য ডলারের লাভকে সীমিত রেখেছে, যা সোনার দামের উপর চাপকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই বাণিজ্য যুদ্ধ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় সম্পদের চাহিদা বাড়িয়েছিল। বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক স্পট সোনার দাম কমিয়েছে, যা ভারতের সোনার দামের উপর প্রভাব ফেলেছে।

এমসিএক্স গোল্ড এবং সিলভার ফিউচার আপডেট

মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স), ৫ জুন, ২০২৫-এ মেয়াদপূর্তির জন্য নির্ধারিত সোনার ফিউচার আজ ১.৪৮% কমে ৯৫,৮৯৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। একইভাবে, ৫ মে, ২০২৫-এ মেয়াদপূর্তির সিলভার ফিউচার ০.২৯% কমে ৯৫,৫৯৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এই পতন বিশ্বব্যাপী মূল্যবান ধাতুর বাজারে সংশোধনের প্রতিফলন ঘটায়।

শহরভিত্তিক সোনার দাম

আজ ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সোনার দাম কমেছে, যার মধ্যে রয়েছে চেন্নাই, মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর এবং হায়দ্রাবাদ। ২৩ এপ্রিলের সর্বশেষ শহরভিত্তিক সোনার দাম নিম্নরূপ:

  • চেন্নাই: ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯৮,৩৫০ টাকা, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৯০,১৫০ টাকা।
  • হায়দ্রাবাদ: ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯৮,৩৫০ টাকা, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৯০,১৫০ টাকা।
  • মুম্বই: ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯৮,৩৫০ টাকা, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৯০,১৫০ টাকা।

রুপোর দামের গতিবিধি

ভারতে রুপোর দাম বুধবার স্থিতিশীল ছিল। ২৩ এপ্রিলের হিসাবে, ১ কেজি রুপোর দাম ১,০১,০০০ টাকা এবং ১০০ গ্রাম রুপোর দাম ১০,১০০ টাকা। রুপোর দাম সোনার তুলনায় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এটি একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাজারের দৃষ্টিভঙ্গি

আইসিআইসিআই ডিরেক্ট কমোডিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, “সোনার দাম তার উত্থানে সাময়িক বিরতি নিতে পারে এবং ডলারের পুনরুদ্ধারের মধ্যে নিম্নমুখী লেনদেন হতে পারে। এছাড়া, প্রধান বাণিজ্যিক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা ঝুঁকির প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং নিরাপদ আশ্রয় সম্পদে সংশোধন আনবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনের উপর নিম্নমুখী শুল্কের ইঙ্গিত দামের অস্থিরতা কমাতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফেডারেল রিজার্ভের পাওয়েলকে বরখাস্ত না করার মন্তব্য ডলারকে সমর্থন করবে। একই সঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল অর্থনৈতিক তথ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হবে, যা সুদের হার কমানোর সময় সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা আনতে পারে।”

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, স্পট গোল্ড ০.৭% কমে ৩,৩৫৭.১১ ডলার প্রতি আউন্সে এবং মার্কিন গোল্ড ফিউচার ১.৫% কমে ৩,৩৬৬.৮০ ডলারে লেনদেন হয়েছে। স্পট সিলভার ০.৫% বেড়ে ৩২.৬৭ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। এই পতন ব্যাপক মুনাফা বুকিং এবং মার্কিন ডলার সূচকের সামান্য পুনরুদ্ধারের ফলাফল।

সোনার দামে আজকের এই বড় পতন ভারতের ক্রেতা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। মার্কিন ডলারের পুনরুদ্ধার, বাণিজ্য যুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাবে সোনার দামে এই সংশোধন ঘটেছে। তবে, বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বিনিয়োগকারীদের বাজারের গতিবিধি এবং মূল অর্থনৈতিক সূচকগুলোর উপর নজর রাখা উচিত। সোনা এবং রুপোর বাজারে অস্থিরতা থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।

Advertisements