গোল্ডের উপর চিনের ‘নজর’! ভারতে সোনার দাম কমছে হু হু করে

সোনার দামের (Gold Price) উপর যেন চিনের ‘নজর’ লেগেছে।  যখন থেকে চিন আমেরিকার উপর শুল্ক আরোপ করেছে, তখন থেকেই সোনার দামে একটানা পতন লক্ষ্য করা…

Gold Price Crash: ₹2900 Drop in 2 Days Amid China Tariff Tensions

সোনার দামের (Gold Price) উপর যেন চিনের ‘নজর’ লেগেছে।  যখন থেকে চিন আমেরিকার উপর শুল্ক আরোপ করেছে, তখন থেকেই সোনার দামে একটানা পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের রাজধানী দিল্লির সরাফা বাজারে টানা দ্বিতীয় দিন সোনার দামে বড় পতন দেখা গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাত্র দুই দিনে সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ২৯০০ টাকা কমেছে।

   

অন্যদিকে, রুপোর দামে টানা পঞ্চম দিন ধরে পতন চলছে এবং এখন পর্যন্ত রুপোর দাম প্রতি কিলোগ্রামে ১০,৫০০ টাকা কমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে আসা এবং সোনার দাম অতিরিক্ত মূল্যায়িত হওয়ার কারণে বাজারে বিক্রির চাপ দেখা দিয়েছে। আগামী দিনগুলিতে সোনার দামে আরও পতনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। আসুন, দিল্লিতে সোনা ও রুপোর বর্তমান দাম এবং এর পিছনের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

সোনা ও রুপোর দামে ধস

অখিল ভারতীয় সরাফা সংঘের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির সরাফা বাজারে সোমবার সোনার দাম ১,৫৫০ টাকা কমে প্রতি ১০ গ্রামে ৯১,৪৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে শুক্রবার ৯৯.৯ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দাম ১,৩৫০ টাকা কমে ৯৩,০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে দাঁড়িয়েছিল। একইভাবে, ৯৯.৫ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দাম ১,৫৫০ টাকা কমে ৯১,০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে নেমেছে, যা গত কারবারি দিনে ৯২,৫৫০ টাকায় বন্ধ হয়েছিল। রুপোর দামেও টানা পঞ্চম দিন ধরে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার রুপোর দাম ৯৫,৫০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে বন্ধ হয়েছিল, যা সোমবার ৩,০০০ টাকা কমে ৯২,৫০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে পৌঁছেছে। গত পাঁচটি কারবারি দিনে রুপোর দামে মোট ১০,৫০০ টাকার পতন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের সিনিয়র কমোডিটি বিশ্লেষক সৌমিল গান্ধী জানিয়েছেন, সোমবার সোনার দামে পতনের কারণ শেয়ার বাজার এবং অন্যান্য সম্পদ শ্রেণিতে চলমান আতঙ্কজনক বিক্রি। এই পরিস্থিতি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত মূল্যবান ধাতুগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে স্পট গোল্ডের দাম ১০.১৬ ডলার কমে ৩,০২৭.২০ ডলার প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে। বাজারে অস্থিরতা এবং বিক্রির চাপই এই পতনের অন্যতম কারণ।” এলকেপি সিকিউরিটিজের গবেষণা বিভাগের উপাধ্যক্ষ (পণ্য ও মুদ্রা) জতিন ত্রিবেদী বলেছেন, “বিনিয়োগকারীদের মনোভাব সতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে স্পষ্টতার অপেক্ষায় তারা রয়েছেন।”

ভবিষ্যতে আরও পতনের আশঙ্কা

যতীন ত্রিবেদী আরও জানিয়েছেন, আগামী দিনে আমেরিকার কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) তথ্য ব্যাজ হার কমানোর সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে, যা বিশ্বব্যাপী সোনার দামের দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, “ভারতীয় বাজারের জন্য বিনিয়োগকারীরা এই সপ্তাহের শেষে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) মুদ্রানীতি পর্যালোচনা সভার দিকেও নজর রাখবেন। এই সভার ফলাফল সোনার দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।” তবে, এশিয়ার বাজারে স্পট রুপোর দাম ১.৬৫ শতাংশ বেড়ে ৩০.০৪ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। কোটাক সিকিউরিটিজের মতে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং চিনের পাল্টা পদক্ষেপ বাজারের মনোভাবকে দুর্বল করেছে। এর ফলে বাজারে ব্যাপক পতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোনার দামে তীব্র পতন দেখা গেছে।

Advertisements

পতনের পিছনে কারণ

বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এই পতনের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। চিনের আমেরিকার উপর শুল্ক আরোপের পর থেকে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো নিরাপদ সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যান্য বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে আসার ইঙ্গিত এবং সোনার দাম অতিরিক্ত মূল্যায়িত হওয়ার ধারণাও বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনে যদি বাণিজ্য উত্তেজনা আরও শিথিল হয় এবং আমেরিকার সিপিআই তথ্য ব্যাজ হার কমানোর সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়, তাহলে সোনার দামে আরও পতন দেখা যেতে পারে।

দিল্লির বাজারে প্রভাব

দিল্লির সরাফা বাজারে এই পতনের প্রভাব স্পষ্ট। সোনার দাম কমায় ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যারা বিনিয়োগের জন্য সোনা কিনতে চান, তারা এই দাম কমাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তবে, যারা আগে বেশি দামে সোনা কিনেছিলেন, তারা এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রুপোর দামে টানা পতন শিল্প ও গহনা ব্যবসায়ীদের জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দিল্লির ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদা কিছুটা কমেছে, কারণ ক্রেতারা দাম আরও কমার অপেক্ষায় রয়েছেন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনা ও রুপোর দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর। প্রথমত, আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের দিক। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার সিপিআই তথ্য এবং ফেডারেল রিজার্ভের ব্যাজ হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। তৃতীয়ত, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি পর্যালোচনা। এই সবকিছুর সমন্বয়ে বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হবে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোনা ও রুপোর দামে এই পতন ভারতীয় বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। চিন-আমেরিকা বাণিজ্য উত্তেজনা, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবে এই মূল্যবান ধাতুগুলোর দামে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। দিল্লির ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে। আপাতত, বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।